Search This Blog

Theme images by MichaelJay. Powered by Blogger.

Blog Archive

Wednesday, May 31, 2017

ঝরা পালক

ঝরা পালক কবি জীবনানন্দ দাশের লেখা প্রথম কাব্যগ্রন্থ। ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে (১৩৩৪ বঙ্গাব্দ) কলকাতা থেকে এটি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। ঝরা পালক কাব্যগ্রন্থের ভূমিকায় জীবনানন্দ লিখেছেন:
ঝরা পালকের কতকগুলি কবিতা প্রবাসী, বঙ্গবাণী, কল্লোল,কালি-কলম, প্রগতি, বিজলি প্রভিতি পত্রিকায় প্রকাশিত হইয়াছিলো। বাকিগুলি নূতন।
শিরোনাম
ঝরা পালক
লেখক
জীবনানন্দ দাশ
দেশ
বা‍ংলা প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত
ভাষা
বাংলা
ধরণ
আধুনিক বাংলা কবিতা
প্রকাশক
শ্রীসুধীরচন্দ্র সরকার
প্রকাশকাল
১৯২৭ খ্রিস্টাব্দ
মিডিয়া
মুদ্রিত গ্রন্থ
কবিতা
৩৫ টি (প্রথম প্রকাশ)
পাতা
১০৩ (প্রথম প্রকাশ)
স্বত্বাধীকার
ভারতীয় কপিরাইট আইনে পাবলিক ডোমেইন
ডাউনলোড
অনলাইন

উৎসর্গ

 ‘–কল্যাণীয়াসু–’

ভূমিকা

"ঝরা পালকের কতকগুলি কবিতা প্রবাসী, বঙ্গবাণী, কল্লোল, কালি-কলম, প্রগতি, বিজলী প্রভৃতি পত্রিকায় প্রকাশিত হইয়াছিল। বাকিগুলি নূতন।"
কলিকাতা। ১০ই আশ্বিন ১৩৩৪,
শ্রীজীবনানন্দ দাশ

Tuesday, May 30, 2017

সূচীপত্র

Monday, May 29, 2017

আমি কবি—সেই কবি

আমি কবি,— সেই কবি,—
আকাশে কাতর আঁখি তুলি হেরি ঝরা পালকের ছবি!
আন্‌মনা আমি চেয়ে থাকি দূর হিঙুল-মেঘের পানে!
মৌন নীলের ইশারায় কোন্ কামনা জাগিছে প্রাণে!
বুকের বাদল উথলি উঠিছে কোন্ কাজরীর গানে!
দাদুরী-কাঁদানো শাঙন-দরিয়া হৃদয়ে উঠিছে দ্রবি!

স্বপন-সুরার ঘোরে
আখের ভুলিয়া আপনারে আমি রেখেছি দিওয়ানা ক’রে!
জন্ম ভরিয়া সে কোন্ হেঁয়ালি হল না আমার সাধা–
পায় পায় নাচে জিঞ্জির হায়, পথে পথে ধায় ধাঁধা!
-নিমেষে পাসরি এই বসুধার নিয়তি-মানার বাধা
সারাটি জীবন খেয়ালের খোশে পেয়ালা রেখেছি ভ’রে!

ভুঁয়ের চাঁপাটি চুমি
শিশুর মতন, শিরীষের বুকে নীরবে পড়ি গো নুমি!
ঝাউয়ের কাননে মিঠা মাঠে মাঠে মটর-ক্ষেতের শেষে
তোতার মতন চকিতে কখন আমি আসিয়াছি ভেসে!
-ভাটিয়াল সুর সাঁঝের আঁধারে দরিয়ার পারে মেশে,–
বালুর ফরাশে ঢালু নদীটির জলে ধোঁয়া ওঠে ধূমি!

বিজন তারার সাঁঝে
আমার প্রিয়ের গজল-গানের রেওয়াজ বুঝি বা বাজে!
প’ড়ে আছে হেথা ছিন্ন নীবার, পাখির নষ্ট নীড়!
হেথায় বেদনা মা-হারা শিশুর, শুধু বিধবার ভিড়!
কোন্ যেন এক সুদূর আকাশ গোধূলিলোকের তীর
কাজের বেলায় ডাকিছে আমারে, ডাকে অকাজের মাঝে!

কবিতাগ্রন্থ : ঝরাপালক

Sunday, May 28, 2017

নীলিমা

রৌদ্র ঝিল্‌মিল,
উষার আকাশ, মধ্য নিশীথের নীল,
অপার ঐশ্বর্যবেশে দেখা তুমি দাও বারে বারে
নিঃসহায় নগরীর কারাগার-প্রাচীরের পারে!
-উদ্বেলিছে হেথা গাঢ় ধূম্রের কুণ্ডলী,
উগ্র চুল্লিবহ্নি হেথা অনিবার উঠিতেছে জ্বলি,
আরক্ত কঙ্করগুলো মরুভূর তপ্তশ্বাস মাখা,
মরীচিকা-ঢাকা!
অগণন যাত্রিকের প্রাণ
খুঁজে মরে অনিবার, পায় নাকো পথের সন্ধান;
চরণে জড়ায়ে গেছে শাসনের কঠিন শৃঙ্খল-
হে নীলিমা নিষ্পলক, লক্ষ বিধিবিধানের এই কারাতল
তোমার ও মায়াদণ্ডে ভেঙেছ মায়াবী।
জনতার কোলাহলে একা ব'সে ভাবি
কোন্ দূর জাদুপুর-রহস্যের ইন্দ্রজাল মাখি
বাস্তবের রক্ততটে আসিলে একাকী!
স্ফটিক আলোকে তব বিথারিয়া নীলাম্বরখানা
মৌন স্বপ্ন-ময়ূরের ডানা!
চোখে মোর মুছে যায় ব্যাধবিদ্ধ ধরণীর রুধির-লিপিকা
জ্বলে ওঠে অন্তহারা আকাশের গৌরী দীপশিখা!
বসুধার অশ্রু-পাংশু আতপ্ত সৈকত,
ছিন্নবাস, নগ্নশির ভিক্ষুদল, নিষ্করুণ এই রাজপথ,
লক্ষ কোটি মুমূর্ষুর এই কারাগার,
এই ধূলি—ধূম্রগর্ভ বিস্তৃত আঁধার
ডুবে যায় নীলিমায়—স্বপ্নায়ত মুগ্ধ আঁখিপাতে,
শঙ্খশুভ্র মেঘপুঞ্জে, শুক্লাকাশে, নক্ষত্রের রাতে;
ভেঙে যায় কীটপ্রায় ধরণীর বিশীর্ণ নির্মোক,
তোমার চকিত স্পর্শে, হে অতন্দ্র দূর কল্পলোক!

Saturday, May 27, 2017

নব নবীনের লাগি

—নব নবীনের লাগি
প্রদীপ ধরিয়া আঁধারের বুকে আমার রয়েছি জাগি!
ব্যর্থ পঙ্গু খর্ব প্রাণের বিকল শাসন ভেঙে,
নব আকাঙক্ষা আশার স্বপনে হৃদয় মোদের রেঙে,
দেবতার দ্বারে নবীন বিধান—নতুন ভিক্ষা মেগে
দাঁড়ায়েছি মোরা তরুণ প্রাণের অরুণের অনুরাগী!
 
ঝড়ের বাতাস চাই।
—চারি দিক ঘিরে শীতের কুহেলি, শ্মশানপথের ছাই,
ছড়ায়ে রয়েছে পাহাড় প্রমাণ মৃতের অস্থি খুলি,
কে সাজাবে ঘর-দেউলের পর কঙ্কাল তুলি তুলি?
সূর্যচন্দ্র নিভায়ে কে নেবে জরার চোখের ঠুলি!
—মরার ধরায় জ্যান্ত কখনও মাগিতে যাবে কি ঠাঁই!
 
—ঘুমায়ে কে আছে ঘরে!
মৃতুশিশু-বুকে কল্যাণী পুরকামিনী কি আজ মরে!
কে আছে বসিয়া হতাশ উদাস অলস অন্যমনা?
দোদুল আকাশে দুলিয়া উঠিছে রাঙা অশনির ফণা,
বাজে বাদলের রঙ্গমল্লী. ঝঞ্ঝার ঝঞ্ঝনা!
ফিরিছে বালক-ঘর পলাতক ঝরা পালকের ঝড়ে!
 
আমরা অশ্বরোহী!—
যাযাবর যুবা, বন্দিনীদের ব্যথা মোরা বুকে বহি,
মানবের মাঝে যে দেবতা আছে আমরা তাহারে বরি,
মোদের প্রাণের পূজার দেউলে তাহার প্রতিমা গড়ি,
চুয়া-চন্দন-গন্ধ বিলায়ে আমরা ঝরিয়া পড়ি,
সুবাস ছড়াই উশীরের মতো, ধূপের মতন দহি!
 
গাহি মানবের জয়!
—কোটি কোটি বুকে কোটি ভগবান আঁখি মেলে জেগে রয়!
সবার প্রাণের অশ্রু-বেদনা মোদের বক্ষে লাগে,
কোটি বুকে কোটি দেউটি জ্বলিছে—কোটি কোটি শিখা জাগে,
প্রদীপ নিভায়ে মানবদেবের দেউল যাহারা ভাঙে,
আমরা তাদের শস্ত্র, শাসন, আসন করিব ক্ষয়!
—জয় মানবের জয়!
 

Friday, May 26, 2017

কিশোরের প্রতি

যৌবনের সুরাপাত্র গরল-মদির
ঢালো নি অধরে তব, ধরা-মোহিনীর
উর্ধ্বফণা মায়া-ভুজঙ্গিনী
আসে নি তোমার কাম্য উরসের পথটুকু চিনি
চুমিয়া চুমিয়া তব হৃদয়ের মধু
বিষবহ্নি ঢালে নিকো বাসনার বধূ
অন্তরের পানপাত্রে তব;
অম্লান আনন্দ তব, আপ্লুত উৎসব,
অশ্রুহীন হাসি,
কামনার পিছে ঘুরে সাজো নি উদাসী।
ধবল কাশের দলে, আশ্বিনের গগনের তলে
তোর তরে রে কিশোর, মৃগতৃষ্ণা কভু নাহি জ্বলে!
নয়নে ফোটে না তব মিথ্যা মরুদ্যান।
অপরূপ রূপ-পরীস্থান
দিগন্তের আগে।
তোমার নির্মেষ চক্ষে কভু নাহি জাগে!
আকাশকুসুবীথি দিয়া
মাল্য তুমি আনো না রচিয়া,
উধাও হও না তুমি আলেয়ার পিছে
ছলাময় গগনের নিচে!
—রূপ-পিপাসায় জ্বলি মৃত্যুর পাথারে
স্পন্দহীন প্রেতপুরদ্বারে
করো নিকো করাঘাত তুমি
সুধার সন্ধানে লক্ষ বিষপাত্র চুমি
সাজো নিকো নীলকন্ঠ ব্যাকুল বাউল!
অধরে নাহিকো তৃষ্ণা, চক্ষে নাহি ভুল,
রক্তে তব অলক্ত যে পরে নাই আজও রানী,
রুধির নিঙাড়ি তব আজও দেবী মাগে নাই রক্তিম চন্দন!
কারাগার নাহি তব, নাহিকো বন্ধন,
দীঘল পতাকা, বর্শা তন্দ্রাহারা প্রহরীর লও নি তুলিয়া,
—সুকুমার কিশোরের হিয়া!
—জীবনসৈকতে তব দুলে যায় লীলায়িত লঘুনৃত্য নদী,
বক্ষে তব নাচে নিকো যৌবনের দুরন্ত জলধি;
শূল-তোলা শম্ভূর মতন
আস্ফালিয়া উঠে নাই মন
মিথ্যা বাধাবিধানের ধ্বংসের উল্লাসে!
তোমার আকাশে
দ্বাদশ সূর্যের বহ্নি ওঠে নিকো জ্বলি
কক্ষচ্যুত, উল্কাসম পড়ে নিকো স্খলি,
কুজ্ঝটিকা আবর্তের মাঝে
অনির্বাণ স্ফুলিঙ্গের সাজে!
সব বিঘ্ন সকল আগল
ভাঙিয়া জাগো নি তুমি স্পন্দন-পাগল
অনাগত স্বপ্নের সন্ধানে
দুরন্ত দুরাশা তুমি জাগাও নি প্রাণে!
নিঃস্ব দুটি অঞ্চলির আকিঞ্চন মাগি
সাজো নিকো দিকভোলা দিওয়ানা বৈরাগী!
পথে পথে ভিক্ষা মেগে কাম্য কল্পতরু
বাজাও নি শ্মশান-ডমরু!
জোছনাময়ী নিশি তব, জীবনের অমানিশা ঘোর
চক্ষে তব জাগে নি কিশোর!
আঁধারের নির্বিকল্প রূপ,
স্পন্দহীন বেদনার কূপ
রুদ্ধ তব বুকে;
তোমার সম্মূখে
ধরিত্রী জাগিছে ফুল্ল সুন্দরীর বেশে,
নিত্য বেলাশেষে
যেই পুষ্প ঝরে,
যে বিরহ জাগে চরাচরে,
গোধূলির অবসানে শ্লোকম্লান সাঁঝে,
তাহার বেদনা তব বক্ষে নাহি বাজে,
আকাঙ্খার অগ্নি দিয়া জ্বালো নাই চিতা,
ব্যথার সংহিতা
গাহ নাই তুমি!
দরিয়ার তীর ছাড়ি দেখ নাই দাব-মরুভূমি
জ্বলন্ত নিষ্ঠুর!
নগরীর ক্ষুব্ধ বক্ষে জাগে যেই মৃত্যুপ্রেতপুর,
ডাকিনীর রুক্ষ অট্টহাসি
ছন্দ তার মর্মে তব ওঠে না প্রকাশি!
সভ্যতার বীভৎস ভৈরবী
মলিন করে নি তব মানসের ছবি,
ফেনিল করে নি তব নভোনীল, প্রভাতের আলো,
এ উদভ্রান্ত যুবকের বক্ষে তার রশ্মি আজ ঢালো, বন্ধু, ঢালো!
 

Interested for our works and services?
Get more of our update !