Search This Blog

Theme images by MichaelJay. Powered by Blogger.

Blog Archive

Monday, December 12, 2016

সাত ভাই চম্পা

সাত ভাই চম্পা


প্রথম ভাই


  


—আমি হব সকাল বেলার পাখি।


সবার আগে কুসুম-বাগে উঠব আমি ডাকি।


সুয্যি মামা জাগার আগে উঠব আমি জেগে,


“হয়নি সকাল, ঘুমো এখন” — মা বলবেন রেগে!


হয়নি সকাল — তাই বলে কি সকাল হবে নাকো!


আমরা যদি না জাগি মা কেমনে সকাল হবে?


তোমার ছেলে উঠলে গো মা রাত পোহাবে তবে!”


উষা দিদির ওঠার আগে উঠব পাহাড়-চুড়ে,


দেখব নীচে ঘুমায় শহর শীতের কাঁথা মুড়ে,


ঘুমায় সাগর বালুচরে নদীর মোহানায়,


বলব আমি, “ভোর হল যে, সাগর ছুটে আয়!"


ঝরনা-মাসি বলবে হাসি, “খোকন এলি নাকি?”


বলব আমি, “নইকো খোকন, ঘুম-জাগানো পাখি!"


ফুলের বনে ফুল ফোটাব, অন্ধকারে আলো,


সুয্যিমামা বলবে উঠে, “খোকন, ছিলে ভালো?”


বলব, “মামা, কথা কওয়ার নাইকো সময় আর,


তোমার আলোর রথ চালিয়ে ভাঙো ঘুমের দ্বার!"


রবির আগে চলব আমি ঘুম-ভাঙা গান গেয়ে,


জাগবে সাগর, পাহাড়, নদী, ঘুমের ছেলে মেয়ে!



দ্বিতীয় ভাই


  


— আমি হব গাঁয়ের রাখাল ছেলে।


বলব, “দাদা, প্রণাম তোমায়, ঘুম ভাঙিয়ে গেলে!”


আঁচল ভরে মুড়ি নেব, হাতে নেব বেণু,


নদীর পারে মাঠের ধারে নিয়ে যাব ধেনু।


বটের ছায়ায় জুটবে এসে রাখাল ছেলের পাল।


বটের ছায়ায় জুটবে এসে রাখাল ছেলের পাল।


আমি হব রাখাল-রাজা মাঠের তেপান্তরে,


ছাতিম তরু ধরবে ছাতা আমার মাথার পরে!


সিংহাসনে পাতবে এনে নবীন ধানের চারা।


গলায় বন-ফুলের মালা ; দুলবে ছাতিম-শাখে


কাঁচা রোদের সোনার ঝালর পাতার ফাঁকে ফাঁকে।


দণ্ড তুলে বলব আমি, “ওগো করদ নদী,


করব শাসন এই মাঠে কর না দিয়ে যাও যদি।


এদেশে না ফললে ফসল, না পেলে ঘাস গোরু,


না হাসিলে ফুলে-ফলে আমার দেশের তরু,


পাহাড় কেটে পাথর এনে রাখব তোমায় বেঁধে,


তোমায় খুঁজে সাগর-মাতা মরবে তোমার কেঁদে!”


বলব মেঘে, “জল দিয়ে যাও, আমি রাখাল-রাজা,


নইলে বন্ধু থামিয়ে দেব তোমার মাদল-বাজা!


রাখব বেঁধে তোমার রাজার ঐরাবতী হাতি!”


বনকে ডেকে বলব, “কানন, শোনো আমার কথা,


ভিড় করে সব নীড় বাঁধিবে সকল পাখি হোথা।


ঝড়কে বলো, আমার আদেশ — একটি পাখির নীড়


উড়ায় যদি, ধরে তারে পরাব জিঞ্জির!”


সন্ধ্যা হলে বাজিয়ে বেণু গোঠের ধেনু লয়ে


ফিরব ঘরে মাঠের রাখাল মায়ের দুলাল হয়ে।



তৃতীয় ভাই


  


— আমি হব দিনের সহচর।


বলব, “ওরে রোদ উঠেছে লাঙল কাঁধে কর!


তোদের ছেলে উঠল জেগে, ওই বাজে তার বাঁশি,


জাগল দুলাল বনের রাখাল, ওঠ রে মাঠের চাষি!"


‘শ্যাওলা’ ‘হাঁসা’ দুই না বলদ দুই ধারেতে জুড়ে


লাঙলের ওই কলম দিয়ে মাটির কাগজ ফুঁড়ে


লিখব সবুজ কাব্য আমি, আমি মাঠের কবি,


উপর হতে করবে আশিস দীপ্ত রাঙা রবি।


ধরায় ডেকে বলব, “ওগো শ্যামল বসুন্ধরা,


শস্য দিয়ো আমাদেরে এবার আঁচল ভরা।


জংলি মেয়ে ছিলে তুমি, ছিল নাকো ‘ছিরি’,


মরুর বুকে থাকতে শুয়ে ফিরতে কানন গিরি।


আমরা তোমায় ধরে এনে দিয়েছি ঘর-বাড়ি,


গা-ভরা তোর গয়না মা গো ময়নামতীর শাড়ি।


জংলা কেটে খেত করেছি, ফসল সেথা ফলে ;


পাহাড়ে তোর ‘বাংলো’ তুলে দ্বীপ রচেছি জলে।


বন্ধ্যা সম যে সুধা তোর একলা নিয়েছিলি,


আমরা নিয়ে সে সুধা তোর বিশ্বে করি বিলি!


ধুলাতে তোর পেতেছি মা সোনার আসন আনি।”


  


খামার ভরে রাখব ফসল গোলায় ভরে ধান,


ক্ষুধায় কাতর ভাইগুলিরে আমি দেব প্রাণ!


এই পুরানো পৃথিবীকে রাখব চির-তাজা,


আমি হব ক্ষুধার মালিক, আমি মাটির রাজা!


চতুর্থ ভাই


  


আমি সাগর পাড়ি দেব, আমি সওদাগর।


সাত সাগরে ভাসবে আমার সপ্ত মধুকর।


আমার ঘাটের সওদা নিয়ে যাব সবার ঘাটে,


চলবে আমার বেচাকেনা বিশ্বজোড়া হাটে।


ময়ূরপঙ্খি বজরা আমার ‘লাল বাওটা’ তুলে


ঢেউ-এর দোলায় মরাল সম চলবে দুলে দুলে।


সিন্ধু আমার বন্ধু হয়ে রতন মানিক তার


আমার তরি বোঝাই করে দেবে উপহার।


দ্বীপে দ্বীপে আমার আশায় রাখবে পেতে থানা,


শুক্তি দেবে মুক্তামালা আমারে নজরানা।


চারপাশে মোর গাংচিলেরা করবে এসে ভিড়


হাতছানিতে ডাকবে আমায় নতুন দেশের তীর।


আসবে হাঙর কুমির তিমি — কে করে তায় ভয় ;


বলব, "ওরে, ভয় পায় যে — এ সে ছেলেই নয়


সপ্ত সাগর রাজ্য আমার, আমি বণিক বীর,


খাজনা জোগায় রাজ্যে আমার হাজার নদীর নীর।


ভয় করি না তোদের দুটো দন্ত নখর দেখে,


জল-দস্যু, তোদের তরে পাহারা গেলাম রেখে


সিন্ধু-গাজি মোল্লামাঝি, নৌ-সেনা ওই জেলে,


বর্শা দিয়ে বিঁধবে তারা, রাজ্যে আমার এলে।”


দেশে দেশে দেয়াল গাঁথা রাখব নাকো আর,


বন্যা এনে ভাঙব বিভেদ করব একাকার।


আমার দেশে থাকলে সুধা তাদের দেশে নেব,


তাদের দেশের সুধা এনে আমার দেশে দেব।


বলব মাকে, “ভয় কী গো মা, বাণিজ্যেতে যাই!


সেই মণি মা দেব এনে তোর ঘরে যা নাই।


দুঃখিনী তুই, তাইতো মা এ দুখ ঘুচাব আজ,


জগৎ জুড়ে সুখ কুড়াব — ঢাকব মা এ লাজ।”


লাল জহরত পান্নাচুনি মুক্তামালা আনি


আমি হব রাজার কুমার, মা হবে রাজরানি।

No comments:
Write comments

Interested for our works and services?
Get more of our update !