প্যাক্ট
কোরাস:
বদনা-গাড়ুতে গলাগলি করে, নব-প্যাক্টের আশনাই।
মুসলমানের হাতে নাই ছুরি, হিন্দুর হাতে বাঁশ নাই।।
আঁটসাট করে গাঁট-ছড়া বাঁধা হল টিকি আর দাড়িতে,
বজ্র আঁটুনি ফসকা গেরো? তা হয় হোক তাড়াতাড়িতে!
একজন যেতে চাহিবে সুমুখে, অন্যে টানিবে পিছনে,
ফসকা সে গাঁঠ হয়ে যাবে আঁট সেই টানাটানি ভীষণে।।
বুকে-বুকে মিল হল নাকো,
মিল হল পিঠে পিঠে? তাই সই।
মিয়াঁ কন, ‘কোথা দাদা মোর?’
আর বাবু কন, ‘মিয়াঁভাই কই?’
বাবু দেন মেখে দাড়িতে খেজাব, মিয়াঁ চৈতনে তৈল,
চার চোখে করে আড়-চোখাচোখি, কী মধু-মিলন হইল!
বাবু কন, ‘দ্যাখো, তোমারে তুষিতে খাই নিষিদ্ধ কুঁকড়ো!’
মিয়াঁ কন, ‘মিল আরও জমে দাদা, যদি দাও দুটো টুকরো!
মোদের মুরগি রামপাখি হল, দাদা তাও হল শুদ্ধি?
গেছে বাদশাহি, মুরগিও গেল, আর কার জোরে যুদ্ধি!’
বাবু কন, ‘পরি লুঙি বি-কচ্ছ, তোমাদের দিল্ তুষিতে!’
মিয়াঁ কন, ‘ফেজে রাখি চৈতনী-ঝাণ্ডা সেই সে খুশিতে!
বহু মিয়াঁভাই বসবাস করে তোমাদের বারাণসীতে,
(আর) বাত হলে তাই ভাত খাই নাকো
আজও তাই একাদশীতে!’
বাবু কন, ‘মোরা চটিকা ছাড়িয়া সেলিমি নাগরা ধরেছি!’
মিয়াঁ কন, ‘গোরু জবাই-এর পাপ হতে তাই দাদা তরেছি।’
বাবু কন, ‘এত ছাড়িলেই যদি ছেড়ে দাও খাওয়া বড়োটা।’
মিয়াঁ কন, ‘দাদা, মুরগি তো নাই, কী দিয়া খাইব পরোটা!’
বাবু কন, ‘গোরু কোরবানি করা ছেড়ে দাও যদি মিয়াঁ ভাই,
(তোরে) সিনান করায়ে সিঁদুর পরায়ে মা-র মন্দিরে নিয়ে যাই।’
মিয়াঁ কন, ‘যদি আল্লা মিয়াঁরে নাহি শোনাও ও হরিনাম,
বলদের সাথে ছাড়িব তোমারে, যা হয় হবে সে পরিণাম।’
‘সারা রারা রারা’ সহসা অদূরে উঠিল হোরির হররা,
শম্ভু ছুটিল বম্বু তুলিয়া, ছকু মিয়াঁ নিল ছোররা!
লাগে টানাটানি হেঁইয়ো হাঁইয়ো, টিকি দাড়ি ওড়ে শূন্যে,
ধর্মে ধর্মে কোলাকুলি করে নব-প্যাক্টেরই পুণ্যে!
বদনা-গাড়ুতে পুনঃ ঠোকাঠুকি, রোল উঠিল, ‘হা হন্ত’।
উচ্চে থাকিয়া সিঙ্গি মাতুল হাসে ছিরকুটি দন্ত!
মসজিদ পানে ছুটিলেন মিয়াঁ, মন্দির পানে হিন্দু,
আকাশে উঠিল চির-জিজ্ঞাসা, করুণ চন্দ্রবিন্দু।।
No comments:
Write comments