কোদালে মেঘের মউজ উঠেছে গগনের নীল গাঙে,
হাবুডুবু খায় তারা-বুদ্বুদ, জোছনা সোনায় রাঙে।
তৃতীয় চাঁদের ‘শাম্পানে’চড়ি চলিছে আকাশ-প্রিয়া,
আকাশ দরিয়া উতলা হল গো পুতলায় বুকে নিয়া।
তৃতীয়া চাঁদের বাকি ‘তেরো কলা’আবছা কালোতে আঁকা,
নীলিম প্রিয়ার নীলা ‘গুল রুখ’গুল রুখ : ফুলের মতো মুখ। অবগুণ্ঠনে ঢাকা।
সপ্তর্ষির তারা-পালঙ্কে ঘুমায় আকাশ-রানি,
সেহেলিসেহেলি : সহচরী, সখী। ‘লায়লি’ দিয়ে গেছে চুপে কুহেলি-মশারি টানি।
দিকচক্রের ছায়া-ঘন ওই সবুজ তরুর সারি,
নীহার নেটের কুয়াশা-মশারি – ও কি বর্ডার তারই?
সাতাশ তারার ফুল-তোড়া হাতে আকাশ নিশুতি রাতে
গোপনে আসিয়া তারা-পালঙ্কে শুইল প্রিয়ার সাথে।
উহু উহু করি কাঁচা ঘুম ভেঙে জেগে ওঠে নীলা হুরি,
লুকিয়ে দেখে তা ‘চোখ গেল’বলে চেঁচায় পাপিয়া ছুঁড়ি!
‘মঙ্গল’তারা মঙ্গল-দীপ জ্বালিয়া প্রহর জাগে,
ঝিকিমিকি করে মাঝে মাঝে – বুঝি বঁধুর নিশাস লাগে।
উল্কা-জ্বালার সন্ধানী-আলো লইয়া আকাশ-দ্বারী
‘কাল-পুরুষ’ সে জাগি বিনিদ্র করিতেছে পায়চারি।
সেহেলিরা রাতে পলায়ে এসেছে উপবনে কোন আশে,
হেথা হোথা ছোটে পিকের কণ্ঠে ফিক ফিক করে হাসে।
আবেগে সোহাগে আকাশ-প্রিয়ার চিবুক বাহিয়া ও কি
শিশিরের রূপে ঘর্মবিন্দু ঝরে ঝরে পড়ে সখী,
নবমী চাঁদের সসারেসসার : ছোটো রেকাবি/থালা। ও কে গো চাঁদিনি-শিরাজিচাঁদিনি-শিরাজি : ইরানের শিরাজ নগরে উৎপন্ন উৎকৃষ্ট মদ। ঢালি
বধূর অধরে ধরিয়া কহিছে – ‘তহুরাতহুরা : পবিত্র পানীয়। পিয়ো লো আলি!’
কার কথা ভেবে তারা-মজলিশে দূরে একাকিনী সাকি
চাঁদের সসারে কলঙ্ক-ফুল আনমনে যায় আঁকি!...
ফরহাদ-শিরীফরহাদ-শিরী : বিশ্বখ্যাত পারসিক প্রেমিক, যিনি সুন্দরী শিরীকে পাওয়ার জন্য পাহাড় কেটে পথ তৈরি করেছিলেন। লায়লি-মজনুঁ মগজে করেছে ভিড়,
মস্তানা শ্যামা দধিয়াল টানে বায়ু-বেয়ালার মিড়!
আনমনা সাকি! অমনি আমরাও হৃদয়-পেয়ালা-কোণে
কলঙ্ক-ফুল আনমনে সখী লিখো মুছো ক্ষণে ক্ষণে!
No comments:
Write comments