Search This Blog

Theme images by MichaelJay. Powered by Blogger.

Blog Archive

Sunday, November 27, 2016

দুর্বার যৌবন

দুর্বার যৌবন


ওরে অশান্ত দুর্বার যৌবন!


পরাল কে তোরে জ্ঞানের মুখোশ সংযম-আবরণ?


ভিতরের ভীতি ঢাকিতে রে যত নীতি-বিলাসীরা ছলে


উদ্ধত যৌবন-শক্তিরে সংযত হতে বলে।


ভাবে, ভাঙনের গদা লয়ে যদি যৌবন মাতে রণে,


গুড়ুক টানিতে পারিবে না বসে সোনার সিংহাসনে!


ওরে দুরন্ত! উড়ন্ত তোর পাখা কে বাঁধিল বল?


দীপ্ত জ্যোতির্শিখায় ঢাকিল শীর্ণ জরাঞ্চল?


ওরে নির্ভীক! ভিখ-মাগা যত পঙ্গুর দলে ভিড়ে –


আঁধার নিঙাড়ি আলো আনিত যে – সে রহিল বাঁধা নীড়ে!


যাহাদের মেরুদণ্ডে লেগেছে মেরুর হিমেল হাওয়া,


যাহাদের প্রাণ শক্তিবিহীন কঠিন তুহিনে ছাওয়া


তাদের হুকুমে প্রাণের বিপুল বন্যা রাখিলি রুখে?


মরুর সিংহ মার খায় সার্কাসি পিঞ্জরে ঢুকে।


  


সৃষ্টির কথা ভাবে যারা আগে সংহারে করে ভয়,


যুগে যুগে সংহারের আঘাতে তাদের হয়েছে লয়।


কাঠ না পুড়ায়ে আগুন জ্বালাবে বলে কোন অজ্ঞান?


বনস্পতির ছায়া পাবে বীজ নাহি দিলে তার প্রাণ!


তলোয়ার রেখে খাপে এরা, ঘোড়া রাখিয়া আস্তাবলে


রণজয়ী হবে দম্ভবিহীন বৈদান্তিকী ছলে!


প্রাণ-প্রবাহের প্রবল-বন্যা বেগে খরস্রোতা নদী


ভেঙেছে দু-কূল, সাথে সাথে ফুল ফুটায়েছে নিরবধি।


জলধির মহা-তৃষ্ণা জাগিছে যে বিপুল নদীস্রোতে,


সে কি দেখে, তার স্রোতে কি ডুবিল, কে মরিল তার পথে?


মানে না বারণ, ভরা যৌবন-শক্তিপ্রবাহ ধায়


আনন্দ তার মরণ-ছন্দে কূলে কূলে উথলায়।


জানে না সে ঘর আত্মীয় পর, চলাই ধর্ম তার


দেখে না তাহার প্রাণতরঙ্গে ডুবিল তরণি কার।


বণিকের দুটো জাহাজ ডুবিবে, তা বলে সিন্ধু-ঢেউ


শান্ত হইয়া ঘুমায়ে রহিবে – শুনিয়াছ কভু কেউ।


ঐরাবত কি চলিবে না, পথে পিপীলিকা মরে বলে?


ঘর পোড়ে বলে প্রবল বহ্নিশিখা উঠিবে না জ্বলে?


অঙ্ক কষে না, হিসাব করে না, বেহিসাবি যৌবন,


ভাঙা চাল দেখে নামিবে না কি রে শ্রাবণের বর্ষণ?


যৌবন কেনা-বেচা হবে কি রে বানিয়ার নিক্তিতে?


মুক্ত-আত্মা আজাদে ভোলাবে প্যাক্টের চুক্তিতে?


তরু ভেঙে পড়ে তাই বলে ঝড় আসবে না বৈশাখী!


ভীরু মেষ-শিশু ভয় পায় বলে রবে না ঈগল পাখি?


  


জ্ঞান ও শান্তি সংযম – বহু ঊর্ধ্বের কথা দাদা,


কহে নির্মল শান্তির কথা যার সারা গায়ে কাদা!


যে মহাশান্তি উদার-মুক্ত আকাশের তলে রহে,


কাম-ক্রোধ-লোভ-মত্ত জীবেরা আজ তারই কথা কহে।


অনন্ত দিক আকাশ যাহার সীমা খুঁজে নাহি পায়


এমন মুক্ত মানব দেখিলে শান্ত কহিয়ো তায়;


ওঠে তরঙ্গ অতি প্রবল যে বিরাট সাগরজলে


সেই উদ্‌বেল শক্তিরে তার অসংযমী কে বলে?


ডোবায় খানায় কূপে ঢেউ নাই, শান্ত তারাই বুঝি?


সংযমী বলে প্রতারক মোরা শুধু জড়তারে পূজি।


  


জাগো দুর্মদ যৌবন! এসো, তুফান যেমন আসে,


সুমুখে যা পাবে দলে চলে যাবে অকারণ উল্লাসে।


আনো অনন্ত-বিস্তৃত প্রাণ, বিপুল প্রবাহ, গতি,


কূলের আবর্জনা ভেসে গেলে হবে না কাহারও ক্ষতি।


বুক ফুলাইয়া দুখেরে জড়াও, হাসো প্রাণখোলা হাসি,


স্বাধীনতা পরে হবে – আগে গাও ‘তাজা ব-তাজা’র বাঁশি।


বসিয়াছে যৌবন-রাজপাটে শ্রীহীন অকাল জরা,


মৃত্যুর বহু পূর্বে এ-জাতি হয়ে আছে যেন মরা!


খোলো অর্গল পাষাণের, খুশি বহুক অনর্গল,


ঝাঁক বেঁধে নীল আকাশে যেমন ওড়ে পারাবত দল।


সাগরে ঝাঁপায়ে পড়ো অকারণে, ওঠো দূর গিরিচূড়ে


বন্ধু বলিয়া কন্ঠে জড়াও পথে পেলে মৃত্যুরে!


ভোলো বাহিরের ভিতরের যত বদ্ধ সংস্কার


মরিচা ধরিয়া পড়ে আছ সব আলির জুলফিকারজুলফিকার : তরবারি।!


জাগো উন্মদ আনন্দে দুর্মদ তরুণেরা সবে,


নাই-বা স্বাধীন হল দেশ, মানবাত্মা মুক্ত হবে।

No comments:
Write comments

Interested for our works and services?
Get more of our update !