Search This Blog

Theme images by MichaelJay. Powered by Blogger.

Blog Archive

Sunday, November 27, 2016

মরুতৃণোজ্জ্বলা

যতীন দাস


আসিল শরৎ সৌরাশ্বিন


দেবদেবী যবে ঘুমায়ে রয়


পাষাণ-স্বর্গ হিমালয়-চূড়ে


শুভ্র মৌলি তুষারময়।


ধরার অশ্রু – সাত সাগরের


লোনা জল উঠি রাত্রিদিন


ধোঁয়াইয়া ওঠে স্বর্গের পানে,


অভিমানে জমে হয় তু্হিন।


পাষাণ স্বর্গ, পাষাণ দেবতা,


কোথা দুর্গতিনাশিনী মা,


বলির রক্তে রাঙিয়া উঠেছে


যুগে যুগে দশ দিক-সীমা।


খড়ের মাটির দুর্গা গড়িয়া


দুর্গে বন্দি পূজারিদল


করে অভিনয়! দেবী-বিগ্রহ


জড় গতিহীন চির-অচল।


দেবতা ঘুমান, ঘুমায় মানুষ,


এরই মাঝে নিজ তপোবলে


জোর করে নেয় দেবতার বর


দৈত্য-দানব দলে দলে।


মোরা পূজা করি, পূজা শেষে চাই


পায়ের পদ্ম শুভ-আশিস,


ওরা চেয়ে নেয় কালীর খড়গ,


বিষ্ণুর গদা, শিবের বিষ।


তপস্যা নাই, ঢাকঢোল পিটে


দেবতা জাগাতে করি পূজা,


দশপ্রহরণধারিণী এল না


দশশো বছরে দশভুজা।....


এমনই শরৎ সৌরাশ্বিনে


অকাল-বোধনে মহামায়ার


যে পূজা করিল লঙ্কেশ্বরে


বধিতে ত্রেতায় রাম-অবতার,


আজিও আমরা সে দেবীপূজার


অভিনয় করে চলিয়াছি,


লঙ্কা-সায়রি রাবণ মোদেরে


ধরিয়া গলায় দেয় কাছি!


দুঃসাহসীরা দুর্গা বলিয়া


হয়তো কাছিতে পড়ে ঝুলে,


দেবীর আসন তেমনই অটল,


শুধু নিমেষের তরে দুলে।


বলি দিয়া মোরা পূজেছি দেবীরে


নব-ভারতের পূজারিদল


গিয়াছিনু ভুলি – দেবীরে জাগাতে


দিতে হল আঁখি-নীলোৎপল।


মহিষ-অসুর-মর্দিনী মা গো,


জাগো এইবার, খড়গ ধরো।


দিয়াছি ‘যতীন’ অঞ্জলি নব –


ভারতের আঁখি-ইন্দিবর।


  


টুটে তপস্যা, ওঠে জাগি ওই


পূজারত অভিনব ভারত,


ভারত-সিন্ধু গর্জি উঠিল


নিযুত শঙ্খ মন্ত্রবৎ।


‘উলু উলু’ বোলে পুরনারী, দোলে


হিম-কৈলাস টালমাটাল,


কারাগারে টুটে অর্গল, ওঠে


রাঙিয়া আশার পূর্বভাল।


ছুটে বিমুক্ত-পিঞ্জর, পায়ে


লুটে শৃঙ্খল ছিন্ন ওই,


নাচে ভৈরব, ভৈরবী নাচে


ছিন্নমস্তা তাথই থই।


আকাশে আকাশে বৃংহিত – নাদ


করে কোটি মেঘ ঐরাবত,


সাগর শুষিয়া ছিটাইছে বারি,


ও কী ফুল হানে পুষ্পরথ।


এ কী এ শ্মশান-উল্লাস নাচে


ধূর্জটি-শিরে ভাগীরথী,


অকূল তিমিরে সহসা ভাতিল


নব-উদিচীর নব জ্যোতি।


বিস্ময়ে আঁখি মেলিয়া চাহিনু,


দেখা যায় শুধু দেবীচরণ,


মৃত্যুঞ্জয় মহাকাল শিব


যে চরণ-তলে মাগে মরণ!


ভৈরব নাচে ঊর্ধ্বে, নিম্নে


খণ্ডিত শির মহিষাসুর,


দুলিছে রক্ত-সিক্ত খড়গ,


কাঁপিছে তরাসে অসুর-পুর।


চিৎকারি ওঠে উল্লাসে


নব-ভারতের নব-পূজারিদল,


‘চাই না মা তোর শুভদ আশিস,


চাই শুধু ওই চরণতল –


যে চরণে তোর বাহন সিংহ,


মহিষ-অসুর মথিয়া যাস।


যদি বর দিস, দিয়ে যা বরদা,


দিয়ে যা শক্তি দৈত্য-ত্রাস’ ।


শুধু দেখা যায় দেবীর রক্ত –


চরণ, খড়গ, মহিষাসুর, -


ওকে ও চরণ-নিম্নে ঘুমায়


সমর-শয়নে বিজয়ী শূর?


কে যতী-ইন্দ্র তরুণ তাপস


দিয়া গেলে তুমি এ কী এ দান?


শবে শবে গেলে প্রাণ সঞ্চারি –


কেশব, বিলায়ে তোমার প্রাণ!


তিলে তিলে ক্ষয় করি আপনারে


তিলোত্তমারে সৃজিলে, হায়!


সুন্দ ও উপসুন্দ অসুর


বিনাশিতে তব তপ-প্রভায়!


হাতে ছিল তব চক্র ও গদা,


গ্রহণ করনি হেলায়, বীর!


বুকে ছিল প্রাণ, তাই দিয়ে রণ


জিনে গেলে প্রাণহীন জাতির।


তোমার হাতের শ্বেত-শতদল,


শুভ্র মহাপ্রাণ তোমার,


দিয়া গেলে তব জাতিরে আশিস,


তোমার হাতের নমস্কার!


  


লইবে কে বীর উন্নত-শির


দেবতার দান সে শতদল,


টলিয়া উঠেছে বিস্ময়ে ত্রাসে


বিন্ধ্য হইতে হিম-অচল।


নামিয়া আসিল এতদিনে বুঝি


হিমগিরি হতে পাষাণী মা,


কে জানে কাঘার রক্তে রাঙিয়া


উঠিতেছে দশদিক-সীমা!


দেখালে মায়ের রক্তচরণ,


কে দেখাবি দেবীমূর্তি মা-র,


ভারত চাহিয়া আছে তার পানে,


কে করিবে প্রতি-নমস্কার!

No comments:
Write comments

Interested for our works and services?
Get more of our update !