দীওয়ান-ই-হাফিজ
গজল ৩
হাত হতে মোর হৃদয় যায় দোহাই বাঁচাও হৃদয়-বান!
আপশোশ! আমার গোপন সব ফসকে যে দেয় নিদয় প্রাণ।
দশ দিনের এই দুন্য়া ভাই, স্বপ্ন-কুহক কল্পলোক;
করতে ভালোই বন্ধুদের, বন্ধু, তোমার লক্ষ্য হোক!
বও অনুখূল বায়, এ নাও ভগ্ন, মনেও শ্রান্তি, হায়!
হয় তো দু-বার দেখব ফের সেই হারা মোর প্রাণ-প্রিয়ায়।
শরাব-সভায় কুঞ্জে আজ বুলবুলি বাঃ বোল বিলায় –
লাও প্রভাতের মদের ভাঁড়, মস্তানামস্তানা : মাতাল, পাগল। সব জলদি আয়!
হাজার লাখ হে মহান-প্রাণ, সালাম সালাম ধন্যবাদ!
দরবেশদরবেশ : যে প্রার্থনা নিয়ে দ্বারে দাঁড়িয়ে থাকে। এ দীন একটি দিন প্রসাদ চায়, নাই অন্য সাধ।
‘দুই দুনিয়ার আরাম’আরাম : ঐহিক পারত্রিক সুখ। সব ব্যাখ্যা ভাই এই এক কথায়, -
দোস্তে মধুর স্নিগ্ধ ভাষ, শত্রু যে – দাও বক্ষ তায়।
সুনাম সুযশ লাভের পথ করলে হারামহারাম : নিষিদ্ধ। , হে দুর্বোধ!
মন্দ বোধ হয় কু-নাম আজ? বদলে দাও, বাস এ দূর পথ।
জমশেদের এই মদের গ্লাস সিকান্দারের আয়নাআয়না : কথিত আছে যে, সিকান্দার (Alexander the great) বৈজ্ঞানিক উপায়ে এক অদ্ভুত আয়না নির্মাণ করেন, তাতে নাকি ইস্তাম্বুল শহর পর্যন্ত যেখানে যা হত, এই আয়নায় তা প্রতিবিম্বিত হয়ে দেখা যেত। ভাই;
দারারদারার : পারস্যের এক বিখ্যাত সম্রাট। দেশের সকল হাল ওই হের বাঃ, ভায় না তায়?
শির ঝোঁকা, নয় মোমের ন্যায় জ্বালবে – সে কি শরম কম? –
ওই পিয়া যার – পরশ ঘায় কঠিন শিলা ও নরম মোম।
বন্ধু দে সব বৈতালিক গায় যদি এই ফারসি-গীত
সন্ন্যাসী পির ভাব-মোহিত নাচবে; এ-গান সার-নিহিত।
ওই খাঁটি মদ – সুফির দল পাপের মা কয়? – আ দুত্তোর!
আইবুড়ো সব ছুকরিদের ঠোঁট-চুমোরও মধুরতর!
হাতখালি? বাস, আয়াস কর আয়েস করার, শেখশেখ : জ্ঞানী। সুখেও;
পরশ-পাথর মত্ততার ‘কারুন’কারুন : কুবের। বানায় ভিক্ষুকেও।
পর্মায়ু দেয় মুমুর্ষুরে ফারেসফারেস : পারস্য। দেশের দিল্-পিয়ায়,
এয়্ সাকি, এই খোশখবর জ্ঞান-বুড়োদের বলবি ভাই!
খাম্খা হাফিজ দেয়নি গা-য় শরাব-রঙিন কুর্তি এই,
আলখেলা পাকপাক : পবিত্র। গায় হে শেখ! লাচার, সব এই ফুর্তিতেই!
ছন্দসূত্র :–
“দিল্ নি রওদ যে দস্তম সাহিব দিলাঁ খোদা রা”
হাত হতে মোর হৃদয় যায় দোহাই বাঁচাও হৃদয়-বান্ !
No comments:
Write comments