Search This Blog

Theme images by MichaelJay. Powered by Blogger.

Blog Archive

Sunday, November 27, 2016

আর কতদিন?

আর কতদিন?


আমার দিলের নিদ-মহলায় আর কতদিন, সাকি,


শারাব পিয়ায়ে, জাগায়ে রাখিবে, প্রীতম আসিবে নাকি?


অপলক চোখে চাহি আকাশের ফিরোজা পর্দা-পানে,


গ্রহতারা মোর সেহেলিরাসেহেলি
: সহচরী।
নিশি জাগে তার সন্ধানে।


চাঁদের চেরাগচেরাগ : প্রদীপ। ক্ষয় হয়ে এল ভোরের দর-দালানে,


পাতার জাফরি খুলিয়া গোলাপ চাহিছে গুলিস্তানে।


রবাবের সুরে অভাব তাহার বৃথাই ভুলিতে চাই,


মন যত বলে আশা নাই, হৃদে তত জাগে ‘আশনাই’আশনাই : প্রেম, প্রণয়।


শিরাজি পিয়ায়ে শিরায় শিরায় কেবলই জাগাও নেশা,


নেশা যত লাগে অনুরাগে, বুকে তত জাগে আন্দেশাআন্দেশা : শঙ্কা, সন্দেহ।


  


আমি ছিনু পথ - ভিখারিনি, তুমি কেন পথ ভুলাইলে,


মুসাফিরখানা ভুলায়ে আনিলে কোন এই মঞ্জিলে?


মঞ্জিলে এনে দেখাইলে কার অপরূপ তসবিরতসবির : অঙ্কিত চিত্র। ,


‘তসবি’তেতসবি : জপমালা। জপি যত তাঁর নাম তত ঝরে আঁখি-নীর!


‘তশবিহি’তশবিহি : চিত্রিত রূপ। রূপ এই যদি তাঁর, ‘তনজিহি’তনজিহি : আসল, প্রকৃত। কীবা হয়,


নামে যাঁর এত মধু ঝরে, তাঁর রূপ কত মধুময়।


কোটি তারকার কীলক-রুদ্ধ অম্বর-দ্বার খুলে


মনে হয় তার স্বর্ণ-জ্যোতি দুলে উঠে কুতুহলে।


ঘুম-নাহি-আসা নিঝঝুম নিশি-পবনের নিশ্বাসে


ফিরদৌস-আলা হতে যেন লাল ফুলের সুরভি আসে।


চামেলি জুঁই-এর পাখায় কে যেন শিয়রে বাতাস করে,


শ্রান্তি ভুলাতে কী যেন পিয়ায় চম্পা-পেয়ালা ভরে।


  


শিস দেয় দধিয়াল বুলবুলি, চমকিয়া উঠি আমি,


ইঙ্গিতে বুঝি কামিনী-কুঞ্জে ডাকিলেন মোর স্বামী।


নহরের পানি লোনা হয়ে যায় আমার অশ্রুজলে,


তসবির তাঁর জড়াইয়া ধরি বক্ষের অঞ্চলে!


সাকি গো! শারাব দাও, যদি মোর খারাব করিলে দীন,


‘আল-ওদুদের’আল-ওদুদ : আল্লাহ্‌র গুণাবলি। পিয়ালার দৌরদৌর : পরিক্রমা। চলুক বিরাম-হীন।


গেল জাতি কুল শরম ভরম যদি এসে এই পথে


চালাও শিরাজি, যেন নাহি জাগি আর এ বে-খুদীবে-খুদী : আত্মবিস্মৃতি। হতে


দূর গিরি হতে কে ডাকে, ওকি মোর কোহ-ই-তুরকোহ-ই-তুর : তুর বা সিনাই পর্বতের নাম। -ধারী?


আমারই মতো কি ওরই ডাকে মুসা হল মরু-পথচারী?


উহারই পরম রূপ দেখে ইশা হল না কি সংসারী?


মদিনা-মোহন আহমদ ওরই লাগি কি চির-ভিখারি?


লাখো আউলিয়া দেউলিয়া হল যাহার কাবা দেউলে,


কত রূপবতী যুবতি যাহার লাগি কালি দিল কুলে,


কেন সেই বহু-বিলাসীর প্রেমে, সাকি, মোরে মজাইলি,


প্রেম-নহরেরপ্রেম-নহর : জলধারা। কওসরকওসর : অমৃত। বলে আমারে জহর দিলি?


জান সাকি, কাল মাটির পৃথিবী এসেছিল মোর কাছে,


আমি শুধালাম, মোর প্রিয়তম, সে কি পৃথিবীতে আছে?


‘খাক’খাক : মাটি। বলিল, না, জানি না তো আমি,‘আব’আব : জল। বুঝি তাহা জানে


জলেরে পুছিনু, তুমি কি দেখেছ মোর বঁধু কোনখানে?


আমার বুকের তসবির দেখে জল করে টলমল,


জল বলে, আমি এরই লাগি কাঁদি গলিয়া হয়েছি জল।


আগুন হয়তো তেজ দিয়া এরে বক্ষে রেখেছে ঘিরে,


সূর্যের ঘরে প্রবেশিনু আমি তেজ-আবরণ ছিঁড়ে।


হেরিনু সূর্য সাত-ঘোড়া নিয়ে সাত আশমানে ছুটে,


সহসা বঁধুর তসবির হেরে আমার বক্ষ-পুটে।


বলিল, কোথায় দেখেছ ইহারে, হইয়াছে পরিচয়?


ইহারই প্রেমের আগুনে জ্বলিয়া তনু হল মোর ক্ষয়।


যুগযুগান্ত গেল কত তবু মিটিল না এই জ্বালা।


ইহারই প্রেমের জ্বালা মোর বুকে জ্বলে হয়ে তেজোমালা।


  


যেতে যেতে পথে দেখিনু বাতাস দীরঘ নিশাস ফেলি


খুঁজিতেছে কারে আকাশ জুড়িয়া নীল অঞ্চল মেলি।


মোর বুকে দেখে তসবির এল ছুটিয়া ঝড়ের বেগে,


বলে – অনন্ত কাল ছুটে ফিরি দিকে দিকে এরই লেগে।


খুঁজিয়া স্থূল ও সূক্ষ্ম জগতে পাইনি ইহার দিশা,


তুমি কোথা পেলে আমার প্রিয়ের এই তসবির-শিশা?


হাসিয়া উঠিনু ব্যোম-পথে, সেথা কেবল শব্দ ওঠে


অলখ-বাণীর পারাবারে যেন শত শতদল ফোটে।


আমি কহিলাম, দেখেছ ইহারে হে অলক্ষ্য বাণী?


বাণীর সাগর কত অনন্ত হল যেন কানাকানি!


‘নাহি জানি নাহি জানি’ বলে ওঠে অনন্ত ক্রন্দন,


বলে, হে বন্ধু, জানিলে টুটিত বাণীর এ বন্ধন।–


জ্যোতির মোতির মালা গলে দিয়া সহসা স্বর্ণরথে


কে যেন হাসিয়া ছুঁইয়া আমারে পলাল অলখ-পথে।


  


‘ও কি জৈতুনি রওগনরওগন : জলপাই-তেল। , ওরই পারে জলপাই-বনে


আমার পরম-একাকী বন্ধু খেলে কি গো নিরজনে?’


শুধানু তাহারে ; নিষ্ঠুর মোর দিল নাকো উত্তর?


জাগিয়া দেখিনু, অঙ্গ আবেশে কাঁপিতেছে থরথর!...


  


জোহরা-সেতারাজোহরা-সেতারা : শুকতারা। উঠেছে কি পুবে? জেগে উঠেছে কি পাখি?


সুরার সুরাহি ভেঙে ফেলো সাকি, আর নিশি নাই বাকি।


আসিবে এবার আমার পরম বন্ধুর বোররাকবোররাক : পক্ষীরাজ।


ওই শোনো পুব-তোরণে তাহার রঙিন নীরব ডাক!

No comments:
Write comments

Interested for our works and services?
Get more of our update !