Search This Blog

Theme images by MichaelJay. Powered by Blogger.

Blog Archive

Wednesday, November 30, 2016

প্রাথমিক শিক্ষা বিল

৬০


প্রাথমিক শিক্ষা বিল


  



(নেপথ্যে কোরাস)

এই বেলা নে ঘর ছেয়ে॥



এই

দেশটা ভীষণ মূর্খ,



এবার

ঘুচাব দেশের দুঃখ।



হবে

চাষারা উচ্চ-প্রাইমার,



ওরে

আর এদেশের নাই মার!



  

ছুটে    আয় আয় সব ছেলেমেয়ে!


  


(নেপথ্যে) এই বেলা নে ঘর ছেয়ে॥


  



বহু

দিন ধরি করি আঁক-পাঁক



এবে

মিলিয়াছে মনোমতো ফাঁক।



তোরা

মাথা পিছু সব টাকা গোন



দিব

পণ্ডিত করে বাছাধন!



  

হবি    বাবু সার রে অলপ‍্‍পেয়ে !


  


(নেপথ্যে) এই বেলা নে ঘর ছেয়ে॥


  



তোরা

পাসনে কো খেতে মাড় ভাত,



নাই

পরনে বসন আধ-হাত।



পাবি

অন্ন-বস্ত্র এইবার



এই

আইন হইবে যেই বার!



  

টাকা    তোল তোরা আদা-জল খেয়ে।


(নেপথ্যে) এই বেলা নে ঘর ছেয়ে॥


  



তোরা

করছিস কি অবিশ্বাস?



কেন

ছাড়িস দীর্ঘ নিশ্বাস?



মোর

টাকার কি আর ভাবনা,



ওই

টাকা বিনে খেতে পাব না?



  

চলে    রাজ্য কি তোর মুখ চেয়ে?


  


(নেপথ্যে) এই বেলা নে ঘর ছেয়ে॥


  



এই

শিক্ষার লাগি হরদম



বলি

খরচটা কিছু করি কম?



আজও

গ্রাম-পিছু প্রতি বৎসর



আট

আনা করে দিই, মনে কর!



তবু

আছে অজ্ঞান-ভূতে পেয়ে।


  


(কোরাস) এই বেলা নে ঘর ছেয়ে॥


  



দিয়ে

তোদেরই শিল ও নোড়া রে



ভাঙিব

তোদেরই দাঁতের গোড়া রে!



‘বাই

জোভ!’আরে ছি, ছি, তা নয়,



তোরা

ভাবিস তাহাই যা নয়!



  

ধিনি    কেষ্ট রে, নেচে আয় ধেয়ে।


(নেপথ্যে) এই বেলা নে ঘর ছেয়ে॥


  



বলি,

চারটে করো তো পয়সা,



তাতেই

চেঁচিয়ে ধরালি বয়সা!



তাও

পাঁচটা কোটি তো লোক ছাই,



হয়

ক-টাকা সে – তুই বল ভাই!



  

তবু    ফ্যালফ্যাল করে রস চেয়ে?


  


(নেপথ্যে) এই বেলা নে ঘর ছেয়ে॥


  



তোরা

কতই রকম দিস ‘সেস’



হলি

‘সে'স’দিয়ে দিয়ে নিঃশেষ,



ওরে

জ্ঞান-এরণ্ডের এ যে ফল!



এ-ও

না খেলে আর কী খাবি বল!



জ্ঞান-

    কান্ডারি এল তরি বেয়ে!


  


(নেপথ্যে) এই বেলা নে ঘর ছেয়ে॥


  



হবি

এবার বিদ্যে-দিগ‍্‍গজ,



পোকা

করিবে মগজে বজবজ!

প্রতিদ্বন্দ্বী

৫৯


প্রতিদ্বন্দ্বী


বাউল


  



আমি

দেখেছি তোর শ্যামে



  

       দেখেছি কদম-তলা,



আমি

দেখেছি তোর অষ্টাবক্রের



  

       আঁকাবাঁকা চলা



  

       তার যত ছলাকলা।



  

       দেখেছি কদম-তলা॥


  



তুই

মোর গোয়ালের ছিঁড়ে দড়ি



  

রাত-বিরেতে বেড়াস চরি,



তুই

রাখাল পেয়ে ভুলে গেছিস



  

       আয়ান-ঘোষের রলা!



  

       দেখেছি কদম-তলা॥

সাইমন-কমিশনের রিপোর্ট

৫৮


সাইমন-কমিশনের রিপোর্ট


(প্রথম ভাগ)


ভারতের যাহা দেখিলেন


  


  কোরাস : ‘কী দেখিতে এসে কী দেখিনু শেষে,’


রিপোর্টে লেখেন সাইমন –


হুটোপুটি করে ছুটোছুটি করে


বুড়োবুড়ি, কাজে নাই মন!


‘ম্যাদা’দল আর ‘উদো’দল পায়ে


হস্ত বুলায় হর্দম,


পুঁচকে দলের ফচকে ছোঁড়ারা


ছিটাইছে বটে কর্দম!


  


ত্যক্তের চেয়ে ভক্তই বেশি,


আহাহা ভক্ত বেঁচে থাক!


ছোলা ভেজা দেব, কাঁচকলা দেব,


নিশ্চয়ই মনে এঁচে রাখ॥


  


আসিতে ভারতে সানকি লইয়া


আসিলে ফকির ফোকরা,


পিছন হইতে ঠোকরায় টাকে


ডেঁপো গোটা কয় ছোকরা।


ছেলে যা দেখিনু, ছেলের চাইতে


পিলে বড়ো, অধিকন্তু –


বৃহত্তম ‘জু’দেখিনু জীবনে –


প্রথম দুপেয়ে জন্তু॥


  


মাথা নাই হেথা, নাইকো হৃদয়,


শুধু পেট আর পিঠ সার,


এত ‘পিঠে’খেয়ে কেমনে হজম


করে, করে নাকো চিৎকার!


  


ঠুঁটো হাত শুধু চিত করে রাখে


শূন্যের পানে তুলিয়া,


বিপদে শ্রীপদ ভরসা, তাহাও


শ্লীপদে গিয়াছে ফুলিয়া॥


  


মাড়োয়ারি আর ‘মালোয়ারি’জ্বর


এদের পরম মিত্র,


মরমরদেরে একেবারে মেরে


রাখিছে দেশ পবিত্র!


ইহাদের হরি বন্ধু মোদেরই


‘গুড ওল্ড জেন্টলম্যান’,


কচুরি-পানায় ডোবা ও খানায়


এঁর কৃপা করে ‘ভ্যানভ্যান’॥


  


এদেশের নারী বেজায় আনাড়ি,


পুরুষের হাতে তবলা,


তবলাতে চাঁটি মারিলে সে কাঁদে,


ইহারা কাঁদে না, অবলা!


  


জরিশাড়ি-মোড়া চকলেট ওরা


বন্দী হেরেম-বাক্সে,


বাহির করিলে খেয়ে নেবে কেউ,


কাজেই বাক্সে থাক সে॥


  


ইসকুলে, প্রেমে, জ্বরে পড়ে পড়ে


জীবন কাটায় ছেলেরা ;


মাঝে মাঝে করে ভ্রান্ত শিষ্ট –


শান্তে লেনিন ভেলেরা।


চোখের চাইতে চশমাই বেশি,


ভাগ্যিস ওরা অন্ধ,


নইলে কখন টানিয়া ধরিত


আমাদের গলাবন্ধ॥


  


আমাদের দেখাদেখি কেহ কেহ


করিছে ক্লাবের মেম‍্‍বার,


স্কার্ট পরে চাষারা, বাবুরা


বিবি লয়ে যায় চেমবার!


  


বিলিতি দাওয়াই ধরিতেছে ক্রমে,


আর বাকি নাই বেশি দিন,


গুডবয় হয়ে গিলিছে আফিম,


হুইস্কি, ব্রাণ্ডি, কুইনিন॥


  


কাফ্রি চেহারা, ইংরিজি দাঁত,


টাই বাঁধে পিছে কাছাতে;


ভীষণ বম্বু চাষ করে ওরা


অস্ত্র-আইন বাঁচাতে!


চাচা-ভাইপোতে মিল নাই সেথা


আড়াআড়ি টিকি দাড়িতে,


যুদ্ধ বাধাই উহাদেরই দিয়ে,


ধরিয়া আনাই ফাঁড়িতে॥


  


উহাদের মতো কেলে রং সব


গাছপালা জল আকাশের,


উহাদের গাই মোদেরই গাই-এর


মতো সাদা দুধ দেয় ফের।


  


কালো চামড়ার ভিতরে ওদের


আমাদেরই মতো রক্ত,


এ যদি না হত – শাশ্বত হত


ও-দেশে মোদের তক্ত!


  


(দ্বিতীয় ভাগ)


ভারতকে যাহা দেখাইলেন


  


   কোরাস : জিশুখ্রিস্টের নাই সে ইচ্ছা,


কী করিব বলো আমরা!


চাওয়ার অধিক দিয়া ফেলিয়াছি


ভারতে বিলিতি আমড়া॥


  


চামড়া ওদের আমাদের মতো


কিছুতেই নহে হইবার!


হোয়াইটওয়াশ যা করিয়াছি–তাই


দেখিতেছি নহে রইবার!


  


আমাদের মতো যারা নয় তারা


অমনই রবে, কী করে বল!


সাদাদের মতো কালা অসভ্য


হইবে স্বাধীন? হরিব‍্‍ল!


  


আঁঠি ও চামড়া বিলিতি আমড়া


মন্টেগু দিল চুষিতে;


শাঁস নাই বলে কাঁদিল, দিলাম


বিলিতি কুমড়ো তুষিতে।


তাহাতেও যারা খুশি নয়, এতো


ভুসি খেয়ে ভরে নাকো পেট,


ঘুসি বরাদ্দ তাহাদের তরে,


ঝুঁটি ধরে করো মাথা হেঁট॥


  


পুলিশের লাঠি আরও বড়ো হোক,


আরও যেন তাতে থাকে গিঁঠ,


হস্তেরে ফেলো অস্ত্র-আইনে,


ঘর হতে তোলা হোক ইঁট!


  


কাগজের শুধু হইয়াছে নোট,


কাগজের হোক রুটিও,


মাথা কেটে দাও, কেটে দাও হাত


থাকে নাকো যেন টুঁটিও॥


  


যতটুকু দড়ি ছাড়িয়াছ, তাহা


গুটাইয়া লও পুনরায়,


একবার যদি বেড়া ভাঙে, তবে


আরবার ধরা হবে দায়!


আরও প্রশস্ত করে দাও পিঠ


ধুর্মুস-পেটা করিয়া,


টিকি ও দাড়ির চাষ করো, লহো


নখর দন্ত হরিয়া॥


  


ও-দেশের জলে ম্যালেরিয়া-বিষ,


উহারা বিলিতি-জল খাক।


গুলি খেতে দাও তাদেরে, ওদের


চ্যাঁচায় যে এক দল কাক!


  


পা কেটে ওদের ঠেকো করে দাও,


উহাদের সাথে ছুটিতে


হার মেনে যায় এরোপ্লেন, পায়ে


গুলি পারে নাকো ফুটিতে॥


  


সিরিঞ্জ লইয়া আরও ফাঁপাইয়া


দাও প্লীহা আর যকৃৎ!


ঢাক কিনে দাও হিঁদুরে, মুসল –


মানে বলো, করো বকরিদ।


  


ভাতে নাই কিছু ভিটামিন, ওতে


মদ হোক, ওরা খাক ফেন,


এ স্বাস্থ্যে ভাত বড়ো ক্ষতিকর,


খুব জোর দুটো শাক দেন॥


অতিশয় বেশি কথা কয়ে কয়ে


বাড়াতেছে প্যালপিটেশন,


গ্যাগ পরাইতে করো সশস্ত্র


ডাক্তারে ইনভিটেশন।


  


মা ভগবতীর সার উহাদের


ব্রেনে আরও দাও পুরিয়া,


যদি থাকে মেরুদণ্ড কারুর


দাও তা ভাঙিয়া চুরিয়া॥


  


বোমা মেরে মেরে পায় নাকো খুঁজে


আজও উদরে ‘ক’অক্ষর,


এ মেষ কেমনে সভ্য ষাঁড়ের


সহিত হানিবে টক্কর?


  


পায়ে ও গলায় ছাড়া ইহাদের


কোনো সে অঙ্গে বল নাই॥


ব্যারাম মাফিক ওষুধ দিলাম,


দিলাম কিন্তু ফল নাই॥

ছুঁচোর কীর্তন

৫৭


ছুঁচোর কীর্তন


  


কীর্তন গায় ছুচুন্দর,


হুতুম প্যাঁচা বাজায় খোল।


ছাতার পাখি দোহার গায়


গোলেমালে হরিবোল॥


কিচির-মিচির কিচির-কিচ


ইঁদুর বাজায় মন্দিরা,


তানপুরা ওই বাজায় ব্যাং


ওস্তাদের সম্বন্ধীরা।


শালিক বায়স ভক্তদল


হরিবোলের লাগায় গোল॥


হুলো বেড়াল মিয়াঁও ম্যাঁও


করছে শুরু খেয়াল-গান,


ব্যা-এ্যা-এ্যা-এ্যা পুং অজ


মারছে জলদ হলক-তান।


রাসভ গলা ভাঙল তার


ধ্রুপদ গেয়ে খেয়ে ঘোল॥


টপ্পা-গানের ঝাড়ছে তান


চিঁহিঁহিঁচিঁহিঁহিঁ অশ্বরাজ,


ঠুংরি-গানের ঝটকা-তান


মারছে ফড়িং ঝোপের মাঝ।


খাণ্ডারবাণী ধ্রুপদ গায়


বলদ গিয়ে পিঁজরাপোল॥


লেড়ি কুকুর বাউল গায়


পুচ্ছ তুলি উচ্চ মুখ,


ভাটিয়ালি গান শেয়াল গায়


ভীষণ শীতের ভুলতে দুখ।


গাব-গুবাগুব ‘কুক’পাখি


বাজায়, ভুতুম বাজায় ঢোল॥


  


ধরা গলায় মহিষ গায়


যেন বুড়ো খাঁ সায়েব,


কাবলিওয়ালা বেহাগ গায়


‘মোর মগায়া’খেয়ে শেব।


ভেড়া বলে, ‘কণ্ঠ মোর


গেছে ধরে খেয়ে ওল!’

সাহেব ও মোসাহেব

৫৬


সাহেব ও মোসাহেব


  


সাহেব কহেন, ‘চমৎকার! সে চমৎকার!’


মোসাহেব বলে ‘চমৎকার সে হতেই হবে যে!


হুজুরের মতে অমত কার?’


  


সাহেব কহেন, ‘কী চমৎকার,


বলতেই দাও, আহা হা!’


মোসাহেব বলে, ‘হুজুরের কথা


শুনেই বুঝেছি, বাহাহা বাহাহা বাহাহা!’


  


সাহেব কহেন, ‘কথাটা কী জান? সেদিন–’


মোসাহেব বলে, ‘জানি না আবার?


ওই যে, কী বলে, যেদিন–’


  


সাহেব কহেন, ‘সেদিন বিকেলে


বৃষ্টিটা ছিল স্বল্প!’


মোসাহেব বলে, ‘আহা হা, শুনেছ?


কীবে অপরূপ গল্প!’


সাহেব কহেন, ‘আরে মলো! আগে


বলতেই দাও গোড়াটা!’


মোসাহেব বলে, ‘আহা-হা গোড়াটা!


হুজুরের গোড়া! এই চুপ, চুপ ছোঁড়াটা!’


  


সাহেব কহেন, ‘কী বলছিলাম,


গোলমালে গেল গুলায়ে!’


মোসাহেব বলে, ‘হুজুরের মাথা! গুলাতেই হবে!


দিব কি হস্ত বুলায়ে!’


  


সাহেব কহেন, “শোনো না! সেদিন


সূর্য উঠেছে সকালে!’


মোসাহেব বলে, ‘সকালে সূর্য?


আমরা কিন্তু দেখি না কাঁদিলে কোঁকালে!’


  


সাহেব কহেন, ‘ভাবিলাম, যাই,


আসি খানিকটা বেড়ায়ে,’


মোসাহেব বলে, ‘অমন সকাল! যাবে কোথা বাবা,


হুজুরের চোখ এড়ায়ে!’


সাহেব কহেন, ‘হল না বেড়ানো,


ঘরেই রহিনু বসিয়া!’


মোসাহেব বলে, ‘আগেই বলেছি! হুজুর কি চাষা,


বেড়াবেন হাল চষিয়া?’


  


সাহেব কহেন, ‘বসিয়া বসিয়া


পড়েছি কখন ঝিমায়ে!’


মোসাহেব বলে, ‘এই চুপ সব!


হুজুর ঝিমান! পাখা কর, ডাক নিমাইএ!’


  


সাহেব কহেন, ‘ঝিমাইনি, কই


এই তো জেগেই রয়েছি!’


মোসাহেব বলে, ‘হুজুর জেগেই রয়েছেন, তা


আগেই সবারে কয়েছি!’


  


সাহেব কহেন, ‘জাগিয়া দেখিনু, জুটিয়াছে যত


হনুমান আর অপদেব!’


‘হুজুরের চোখ, যাবে কোথা বাবা?’


প্রণমিয়া কয় মোসাহেব॥

রাউন্ড-টেবিল-কনফারেন্স

৫৫


রাউন্ড-টেবিল-কনফারেন্স


  


কোরাস : দড়াদড়ির লাগবে গিঁঠ


 গোল-টেবিলের বৈঠকে!


   ঠোকর মারে লোহায় ইঁট


 এ ঠকে কী ওই ঠকে॥


  


   ব্যান্ড বাজে, ইং-ল্যান্ডে ওই


 চলল লিডার্স এ্যান্ড কোং,


   শকুন মাতুল কালনেমি, –


 কণ্ঠে লাউড-স্পিকার চোং!


   তাদের ছাড়া কুম্ভীরে


 মাছের দুঃখ কইত কে॥


  


   চলছে নরম গরম চাঁই


 হোমরা চোমরা ওমরা যায়,


   ধুনতে তুলো ধপড় ধাঁই


 ডোমিনিয়ন-ডোমরা যায়।


   বলছে ডেকে, ‘দেখ রে দেখ


 প্রতাপ চলে চৈতকে॥’


ডিম-গোলাকার গোল-টেবিল


করবে সার্ভ অশ্ব-ডিম,


তা দিবে তায় ধাড়ির দল,


তা নয় দিলে ততঃ কিম?


আনবে স্বরাজ ব্রিটিশ-বর্ন,


অস্ট্রেলিয়ার ভাইপোকে॥


  


স্বর্গ ভেবে ধাপার মাঠ


ধাপা-মেলের ময়লা যায়,


কুটুম ভেবে কেষ্টরে


বৈকুন্ঠে গয়লা যায়


স্বরাজ-মাখম উঠবে যে–


নইলে এ ঘোল মইত কে॥


  


বেছে বেছে পিঁজরাপোল


নড়বড় বড়োর দল


আনল বুড়ো হাবড়াদের,


যাত্রা-কমিক দেখবি চল!


ঘাঁটা-পড়া ঘাড় ওদের,


নয় এ বোঝা বইত কে॥


বাঘ নেবে পাঠ বেদান্তের,


বি-দন্ত সব পুরুত যায়,


করবে শান্তি মন্ত্রপাঠ


ব্যাঘ্র! ব্যগ্র বক্ষে আয়!


শিখাবে অদ্বৈতবাদ


দ্বিধা-ভক্ত দ্বৈতকে॥


  


বাধাস নে আর লটঘটি


দোহাই বাবা চ্যাংড়া থাম!


এমন ফলার কাঁচকলার,


তোরাও পাবি ল্যাংড়া আম!


সাগর মথি আনবে সব


হয় সুধা নয় দই টকে॥

দে গোরুর গা ধুইয়ে

৫৪


‘দে গোরুর গা ধুইয়ে’


  


কোরাস : দে গোরুর গা ধুইয়ে॥


  


   উলটে গেল বিধির বিধি


 আচার বিচার ধর্ম জাতি,


   মেয়েরা সব লড়ুই করে,


 মদ্দ করেন চড়ুই-ভাতি!


  


   পলান পিতা টিকেট করে–


   খুকি তাঁহার পিকেট করে!


   গিন্নি কাটেন চরকা, –কাটান


 কর্তা সময় গাই দুইয়ে!


  


কোরাস : দে গোরুর গা ধুইয়ে ॥


  


   চর্মকার আর মেথর চাঁড়াল


 ধর্মঘটের কর্মগুরু!


   পুলিশ শুধু করছে পরখ


 কার কতটা চর্ম পুরু!


   চাটুজ্যেরা রাখছে দাড়ি,


   মিয়াঁরা যান নাপিত-বাড়ি!


   বোঁটকা-গন্ধী ভোজপুরি কয়


 বাঙালিকে –‘মৎ ছুঁইয়ে!’


কোরাস : দে গোরুর গা ধুইয়ে ॥


  


   মাজায় বেঁধে পইতে বামুন


   রান্না করে কার না বাড়ি,


   গা ছুঁলে তার লোম ফেলে না,


 ঘর ছুঁলে তার ফেলে হাঁড়ি!


  


   মেয়েরা যান মিটিং হেদোর,


   পুরুষ বলে, ‘বাপরে দে দোর!’


   ছেলেরা খায় লাপসি হুড়ো,


 বুড়োর পড়ে ঘাম চুঁইয়ে!


  


কোরাস : দে গোরুর গা ধুইয়ে ॥


  


   ভয়ে মিয়াঁ ছাড়ল টুপি,


 আঁটল কষে গোপাল-কাছা,


   হিন্দু সাজে গান্ধি-ক্যাপে,


 লুঙ্গি পরে ফুঙ্গি চাচা!


  


   দেখলে পুলিশ গুঁতোয় ষাঁড়ে,


   পুরুষ লুকায় বাঁশের ঝাড়ে!


   খ্যাঁদা বাদুড় রায়-বাহাদুর,


 খান-বাহাদুর কান খুইয়ে॥


কোরাস : দে গোরুর গা ধুইয়ে ॥


  


   খঞ্জ নেতা গঞ্জনা দেয়,


 চলতে নারে দেশ যে সাথে!


   টেকো বলে, ‘টাক ভালো হয়


 আমার তেলে, লাগাও মাথে!’


  


   ‘কী গানই গায়’– বলছে কালা;


   কানা কয়, কী নাচছে বালা!’


   কুঁজো বলে, ‘সোজা হয়ে


 শুতে যে সাধ, দে শুইয়ে!’


  


কোরাস : দে গোরুর গা ধুইয়ে ॥


  


   সস্তা দরে দস্তা-মোড়া


 আসছে স্বরাজ বস্তা-পচা,


   কেউ বলে না, ‘এই যে লেহি’


 আসলে ‘যুদ্ধ দেহি’র খোঁচা।


   গুণীরা খায় বেগুন-পোড়া,


  


   বেগুন চড়ে গাড়ি-ঘোড়া!


   ল্যাংড়া হাসে ভেংড়ো দেখে


 ব্যাঙের পিঠে ঠ্যাং থুইয়ে!


  


কোরাস : দে গোরুর গা ধুইয়ে ॥

ডোমিনিয়ন স্টেটাস

৫৩


ডোমিনিয়ন স্টেটাস


  


কোরাস : বগল বাজা দুলিয়ে মাজা,


বসে কেন অমনি রে!


  ছেঁড়ে ঢোলে লাগাও চাঁটি,


মা হবেন আজ ডোমনি রে॥


  


  রাজা শুধু রাজাই রবেন


পগার-পারে নির্বাসন,


  রাজ্য নেব দু ভাই মিলে


দুর্যোধন আর দুঃশাসন!


  


  অন্ধ ধৃতরাষ্ট্র রবে


সিংহাসনে মাত্র নাম!


  কোঁতকা যাবে, রইবে শুধু


বোঁটকা খানিক গাত্রঘাম॥


  


  অনেক-কিছু সয়ে গেছে,


গন্ধটা আর সইবে না?


  কী কস? গলা-বন্ধটা? এও


দুদিন বাদে রইবে না!


  


  কলসি-কানার প্রহার খেয়েও


প্রভু কেয়সা প্রেম বিলায়।


  গউর বলে, ‘প্রেমসে’নাচে


জগাই মাধাই – দেখবি আয়॥


রইত তো কেউ রাজা হেথাও,


না হয় সেথাই রইল কেউ।


আচ্ছা ফ্যাসাদ যা হোক! তবু


বাঘের পিছে লাগবি ফেউ?


  


ঠুঁটো হলেও হাত পেলি তো!


ছিলি যে একদম বে-হাত!


একেবারেই ঠ্যাং ছিল না,


পেলি তো এক ঠ্যাং নেহাত!


  


ভিক্ষের চাল কাঁড়াই হোক–আর


আকাঁড়া – তাই ঝোলায় ভর।


ওই চিবিয়ে জল খেয়ে থাক!


ফেনও পাবি অতঃপর॥


  


ধৈর্য ধরে থাকে বেড়াল


তাই তো শেষে পায় কাঁটা,


পাত হতে সে মাছ তুলে নেয়?


তেমনি সে যে খায় ঝাঁটা॥


ভারত একার নয় তো কারুর –


বিশ্ব-আড়ত, পীঠস্থান!


পারত-পক্ষে মারতে কসুর


করেনি কেউ হুন পাঠান!


  


চিরটা কাল বনের মোরা


লোমশ-মুনিই ছিলুম দেখ!


আহার ছিল শাক পাতা আর


ভাবের গাঁজা ছিলিম টেক!!


  


আজ তবু কেক বিস্কুট খাস,


হয়েও গেলি প্রায় রাজাই!


গাল বাজাই আয় কানাডা আর


অস্ট্রেলিয়ার ভায়রা-ভাই!


  


ধুচনি মাথায় হাতে ধামা


দেখে মোদের রসিক-রাজ –


ডোমের জাতি ভেবে–দিলেন


ডোমনি করে মাতায় আজ॥


বন্দিনি মা ছিলেন আহা,


আজ দিয়েছে মুক্তি রে!


বাজাও ধামা মামার নামে,


রক্ত ঢালো বুক চিরে!


  


এবার থেকে ধামাধারী


বলদ-দল, ভাবনা কি?


দিব্যি খাবে ডুবিয়ে নুলো


পাতনা নাদায় জাব মাখি॥


  


হাতির পিছে নেংচে চলে


ব্যাংছা এবং খলসে রে!


দোহাই দাদা, চলিসনে আর,


চোখ যে গেল ঝলসে রে!


  


‘মাভৈঃ! এবার স্বাধীন হনু!’


যাই বলেছি, পৃষ্ঠে ঠাস!


পড়ল মনে, পীঠস্থান এ,


ডোমিনিয়ন স্টেটাস!

লিগ-অব-নেশন

৫২


লিগ-অব-নেশন


[সিংহ-ইংরাজ॥ হস্তী-ভারতবর্ষ॥ বাঘ-ফ্রান্স॥ ভল্লুক-রুশিয়া॥


হাঙর-ইটালি॥ নেকড়ে-অস্ট্রিয়া॥ শিব-গ্রিস॥


হায়েনা-আমেরিকা॥ ঈগল-জার্মানি॥]


  


        কোরাস :


বসেছে শান্তি-বৈঠকে বাঘ,


সিংহ, হাঙর, নেকড়ে!


বৈষ্ণব গোরু, ছাগ, মেষ এসে


হরিবোল বলে দেখ রে॥


  


শিবা, সারমেয়, খটাস, শকুনি–


দু-নয়ন লবণাক্ত


কেঁদে কয়, ‘দাদা, নামাবলি নেব


আর রব নাকো শাক্ত!


কেন রেষারেষি দ্বেষাদ্বেষি বৃথা,


দিব ফেলে নখ দন্ত,


তপস্বী হয়ে বনে যাব সবে,


পশুর হউক অন্ত।


  


ছাগ মেষ সব কে কোথা আছিস,


নিয়ে আয় সব ঢাক-ঢোল,


এসেছেন গোরা প্রেম-আনন্দে


ন্যাজ তুলে সবে হরিবোল!


শিশু-হাসি হেসে নব জিশু-বেশে


এসেছেন আহা বনমাঝ,


অজিন-আসন এনে দে হরিণ,


বসিবেন গোরা, পশুরাজ॥'”


  


পশুরাজ কন, ‘পশুদল, শোনো,


শোনো মোর বাণী স্বস্তির।’


বাঘা কয়, ‘প্রভু! দন্ত বেজায়


বাড়িয়া উঠিছে হস্তীর।’


  


প্রভু কন, ‘বাবা শান্তির এই


বৈঠক তারই জন্যে!’


নেকড়ে অমনি কহে, ‘চুপ! চুপ!


শুনিয়া ফেলিবে অন্যে!’


  


হাবাতে হাঙর খেজুর-গুঁড়ির


লেজুর করিয়া উচ্চ,


বলে, ‘প্রভু তুমি ধূমকেতু-তারা,


এ ভক্ত তার পুচ্ছ!’


প্রভু কন, ‘আহা, এতদিন পরে


মিলিল ভক্ত হনুমান!’


হাঙরের চোখে সাঁতার-সলিল,


বলে, ‘প্রভুর কী অনুমান!’


  


খেঁকড়ে-কণ্ঠ নেকড়ে কহিল,


‘হায়েনা তো প্রভু আয়েনা!


আমরা করিব হরিনাম, আর


সে নেবে আফ্রিকা চায়েনা!’


ব্যাঘ্র কহিল, ‘সে স্যাঙাত যে রে


আছে রগ ঘেঁসে আমারই!’


প্রভু কন, ‘ওই নোড়া দিয়ে দাঁত


ভাঙিব ভালুক মামারই॥’


  


হাঙর কহিল, ‘ভালুক মামা যে


ক্রমেই আসিছে রুষিয়া!’


প্রভু কন, ‘আর কটা দিন ব্যাটা


বাঁচিবে আমড়া চুষিয়া?’


লড়ালড়ি করে হায়েনা ভালুক


দুটোরই ধরিবে হাঁপানি,


ছিনেজোঁক রবে লাগিয়া পিছনে,


পাশে চিতে বাঘ জাপানি!


  


হাড়গোড়-ভাঙা ঈগল পক্ষী


কহিল পক্ষ ঝাপটি,


‘প্রভু তব পিছে চাপকান-ঢাকা


আফগান মারে ঘাপটি!’


  


প্রভু কন, ‘ওরই ভাবনায় বাবা


ধরেছে রক্ত-আমেশা!


গোস্ত খাওয়ায়ে দোস্ত করিতে


তাই তো চেষ্টা হামেশা!’


  


শিবা কয়, ‘প্রভু, সুরকি-রাঙানো


টুপি ছাড়িয়াছে তুর্কি!’


প্রভু কন, ‘মজি সংসার-মোহে


ছাড়িল খোদার নূর কি?


  


কপাল মন্দ! কী করিবে বলো!


অদৃষ্টে নাই ভেস্ত!’


শিবা কয়, ‘যাব আমিই ভেস্তে


তাহলে, বিচার বেশ তো!’


সাত হাত দাঁত বের করে এল


এমন সময় হস্তী,


শুণ্ড বুলায়ে মুণ্ডে কহিল,


‘করো মোরও সাথে দোস্তি!’


  


‘রে গজমূর্খ!’বলি প্রভুপাদ


পশুরাজ ওঠে গর্জি –


‘কার মর্জিতে তুই এলি হেথা


চিড়িয়াখানারে বর্জি!’


  


‘গজরাজ আমি, অজ নই’কহে,


অঙ্গ দুলায়ে হস্তী,


‘চিড়িয়াখানার পিঞ্জর ভেঙে


এসেছি বনের বস্তি!’


  


শকুনি, খটাস, শিবা, সারমেয়


তুলিল ভীষণ কলরোল;


তক্ত প্রভুর তুলি পশুদল


বল ‘বলো হরি হরিবোল!’

সর্দা-বিল

৫১


সর্দা-বিল


  


ডুবল ফুটো ধর্ম-তরি


ফাটল মাইন সর্দার।


উঠল মাতম ‘সামাল সামাল


ব-মাল মেয়ে-মর্দার॥


  



  


এ কোন এল বালাই, এবে


পালাই বল কোন দেশ।


গাছের তলায় ঘড়েল শেয়াল,


কাকের মুখে সন্দেশ!


কন্যা-ডোবা বন্যা এল,


ডুবল বুঝি ঘর-দ্বার॥


  



  


আয়েশ করে বিয়ের মেয়ের


বাড়বে বয়সে চৌদ্দ,


বাপের বুকের তপ্ত খোলায়,


দিব্যি গেয়ান-বোধ তো!


হদ্দ হলেন বউদি ভেবে,


ছাড়ল নাড়ি বড়দার॥


  



  


শূন্য স্বর্গ-মার্গে যেত


গৌরীদানের মারফত


যমের যমজ জামাতৃকে


লিখে দিয়ে ফারখত


নৈকষ্য কস্য এখন,


জাত গেল ‘মেল খড়দা’র॥



  


দেব‍্‍তা বুড়ো শিব যে মাগেন


আট-বছরি নাতনি,


চতুর্দশী মুক্ত-কেশী–


কনে নয়, সে হাথনী!


পুঁটুলি নয়, এঁটুলি সে,


কিংবা পুলিশ-সর্দার॥


  



  


সিংগি চড়া ধিঙ্গি মেয়ে


বউ হবে কি, বাপ রে!


প্রথম প্রণয়-সম্ভাষণেই


হয়তো দেবে থাপড়ে।


লাফ দিয়ে সে বাইরে যাবে


ঝাঁপ খুলে ওই পর্দার॥


  



  


সম্বন্ধ ভুলে শেষে


যা তা বলে ডাকব?


বধূ তো নয়–যদুর পিসি!


কোথায় তারে রাখব!


ধর্মিনী নয়, জার্মানি-শেল!


গো-স্বামী! খবরদার!



  


ঠাকুর ভাশুর মানবে নাকো,


রাখবে না মান দুর্গার


হয়তো কবে বলবে—‘পিয়ো,


ঝোল রেঁধেছি মুরগার’!


আনবে কে বাপ গুর্খা-সিপাই


দন্ত-নখর-বর্দার॥


  



  


টাকাতে নয় ভাবনাতে শেষ


মাথাতে টাক পড়বে!


যোদ্ধা বামা গুটিয়ে জামা


কথায় কথায় লড়বে!


যেই পাবে না শেমিজ বডিস


কৌটো পানের জর্দার॥


  



  


জাত মেরেছিস, ভেবেছিনু,


জাতিটা নয় যাক গে,


গৃহিনী-রূপ গ্রহণীরোগ


তাও ছিল শেষ ভাগ্যে!


দোক্তা ফেলে গিন্নি কাঁদেন,


কর্তা চলেন হরদ্বার॥

প্যাক্ট

৫০


প্যাক্ট


  



কোরাস :

বদনা-গাড়ুতে গলাগলি করে,



  

         নব-প্যাক্টের আসনাই,



  

মুসলমানের হাতে নাই ছুরি,



  

         হিন্দুর হাতে বাঁশ নাই॥



  

আঁটসাঁট করে গাঁট-ছড়া বাঁধা



  

         হল টিকি আর দাড়িতে,



  

‘বজ্র আঁটুনি ফসকা গেরো’? তা



  

         হয় হোক তাড়াতাড়িতে!



  

একজন যেতে চাহিবে সুমুখে,



  

         অন্যে টানিবে পিছনে,



  

ফসকা সে গাঁট হয়ে যাবে আঁট



  

         সেই টানাটানি ভীষণে!


  



  

বুকে বুকে মিল হল নাকো, মিল



  

         হল পিঠে পিঠে? তাই সই।



  

মিয়াঁ কন, ‘কোথা দাদা মোর?’আর



  

         বাবু কন ‘মিয়াঁ ভাই কই’?



  

বাবু দেন মেখে দাড়িতে ‘খেজাব’খেজাব : কলপ।,



  

         মিয়াঁ চৈতনে তৈল,



  

চার চোখে করে আড়া-চোখাচোখি



  

         কী মধু-মিলন হইল!



  

বাবু কন, ‘খাই তোমারে তুষিতে



  

         ওই নিষিদ্ধ কুঁকড়ো!’



  

মিয়াঁ কন, ‘মিল আরও জমে দাদা,



  

         যদি দাও দুটো টুকরো!



  

মোদের মুরগি হল রামপাখি, দাদা,



  

         তাও হল শুদ্ধি?



  

বাদশাহি গেছে, মুরগিও গেল,



  

         আর কার লোভে যুদ্ধি॥’



  

বাবু কন, ‘পরি লুঙি বি-কচ্ছ



  

         তোমাদের দিল্ তুষিতে!’



  

মিয়াঁ কন, রাখি ফেজে চৈতনি-



  

         ঝান্ডা সেই সে খুশিতে!



  

আমাদের কত মিয়াঁ ভাই করে



  

         বাস তব বারাণসীতে,



(আর)

বাত হলে ভাই ভাত খাই নাকো



  

         আজও তাই একাদশীতে!’



  

বাবু কন, ‘দ্যাখো চটিকা ছাড়িয়া



  

         সেলিমি নাগরা ধরেছি!’



  

মিয়াঁ কন, গোরু জবাই-এর পাপ



  

         হতে তাই দাদা তরেছি!’



  

বাবু কন, ‘এত ছাড়িলেই যদি,



  

         ছেড়ে দাও খাওয়া বড়োটা!’



  

মিয়াঁ কন, ‘দাদা মুরগি তো নাই,



  

         কী দিয়া খাইব পরটা!’



  

বাবু কন, ‘গোরু কোরবানি করা



  

         ছেড়ে দাও যদি মিয়াঁ ভাই,



তোরে

সিনান করায়ে সিঁন্দুর পরায়ে



  

         মার মন্দিরে নিয়া যাই।‘



  

মিয়াঁ কন, ‘যদি আল্লা মিয়াঁর



  

         ঘরে নাহি লও হরিনাম,



  

বলদের সাথে ছাড়িব তোমারে,



  

         যা হয় হবে সে পরিণাম!’


  



  

‘সারা-রারা-রারা’সহসা অদূরে



  

         উঠিল হোরির হররা!



  

শম্ভু ছুটিল বম্বু তুলিয়া,



  

         ছকু মিয়াঁ নিল ছোররা!



  

লাগিল হেঁচকা হেঁইয়ো হাঁইয়ো,



  

         টিকি দাড়ি ওড়ে শূন্যে–



  

ধর্মে ধর্মে করে কোলাকুলি



  

         নব-প্যাক্টেরই পুণ্যে।


  



  

বদনা-গাড়ুতে পুন ঠোকাঠুকি,



  

         রোল উঠিল ‘হা হন্ত!’



  

ঊর্ধ্বে থাকিয়া সিংগি-মাতুল



  

         হাসে ছিরকুটি দন্ত!



  

মসজিদ পানে ছুটিলেন মিয়াঁ,



  

         মন্দির পানে হিন্দু;



  

আকাশে উঠিল চির-জিজ্ঞাসা –



  

         করুণ চন্দ্রবিন্দু!

যদি

৪৯


যদি


কীর্তন


  



যদি

শালের বন হত শালার বোন



আর

কনে বউ হত ওই গৃহেরই কোণ।



  

ছেড়ে    যেতাম না গো,



আমি

থাকিতাম পড়ে শুধু, খেতাম না গো!



যদি

শালের বন হত শালার বোন –



  

আমি    ওই বনে যে হারিয়ে যেতাম!



  

ওই      বৃন্দাবনে চারিয়ে যেতাম!


  



  

ওই     মাকুন্দ হত যদি কুন্দ-বালা



  

হত     দাড়িম্ব-সুন্দরী দাড়িওয়ালা!



  

আমি    ঝুলে যে পড়িতাম



  

তার     দাড়ি ধরে –



  

ওগো    দুর্গা বলে –



  

আমি    ঝুলে যে পাড়িতাম!



হত

চিমটি শালির যদি বাবলা কাঁটা,



আর

শর-বন হত তার খ্যাংরা ঝাঁটা!


  



দোয়ার্কি :

বিষ ঝেড়ে যে দিত তোর খ্যাংরা মেরে



  

বিষ    ঝেড়ে যে দিত তোর!



  

যদি একই শালি



  

দিলে গো মা কালী,



  

সে যে   শালি নয় বিশালী (মা গো)



  

মাগো   বিশাল বপু তার



  

বিশালী সে – শালি নয়, শালি নয়!

খিচুড়ি জন্তু

৪৮


খিচুড়ি জন্তু


মালবশ্রী – কাওয়ালি


  


জন্তুর মাঝে ভাই উট – খিচুড়ি!


মদ খেয়ে সৃজিয়াছে স্রষ্টা-শুঁড়ি॥


দো-তালার উঁচু আর তে-তালার ফাঁক –


  ঢিমে তে-তলার ফাঁক,


অষ্টাবক্রীয় দশটা বাঁক,


হামা দিয়ে চলে যেন তাড়কা খুড়ি॥


জিরাফের গলা তার ঘোটকিনী মুখ,


আগাগোড়া গোঁজামিল বাঁদুরে ভালুক,


গাড়িকে এ গাড়ি বাবা জুড়িকে জুড়ি॥


লাগিয়াছে দেহে গজ-কচ্ছপ রণ,


কচ্ছপি পিঠ আর গজ-নি চরণ,


আরবের হাজি মিয়াঁ – বাপ রে থুড়ি॥

হিতে বিপরীত

৪৭


হিতে বিপরীত


কীর্তন


  



আমি

তুরগ ভাবিয়া মোরগে চড়িনু



  

  সে     লইল মিয়াঁর ঘরে।



আমার

কালি-মা ছাড়ায়ে কলেমা পড়ায়ে



  

         বুঝি মুসলিম করে!



আঁখর :

আমায়    বুঝি মুসলিম করে গো!



  

শেষে     আস্ত ধরিয়া গোস্ত খাওয়ায়ে –



  

         মামদো করিবে গোরা গো!



আমার

টিকি করি দূর রেখে দেবে নূর



  

         জবাই করিবে পরে গো॥



আমি

বাসব ভাবিয়া রাসভে পূজিনু



  

         স্বর্গে যাইতে সোজা,



সে যে

লয়ে এঁদো ঘাটে, ফেলে দিল পাটে



  

         ভাবিয়া ধোবির বোঝা!


  



আঁখর :

হল হিতে বিপরীত সবই গো!


  



আমি

ভবানী ভাবিয়া করিতে প্রণাম



  

         হেরি বাগদিনি ভবি গো



আমি

শীতল হইতে চাহিনু, আনিল



  

         শীতলা-বাহনে ধোবি গো॥



বাবা

শিবের বাহন ভাবিয়া বৃষভ-



  

         লাঙুল ঠেকানু ভালে,



হায়

নিল না সে পূজা, শিং দিয়ে সোজা



  

         গুঁতায়ে ফেলিল খালে!


  



আঁখর :

আমার কপাল বেজায় ফুটো গো!


  



আমি

জগন্নাথ হেরিতে হেরিনু



  

         ধবল-কুষ্ঠী ঠুঁটো গো!



বাঁকা

অঙ্গ হেরিয়া জড়ায়ে ধরিতে



  

         হেরি ত্রিভঙ্গ খুঁটো গো॥



মোর

মহিষী গৃহিণী খুশি হবে ভেবে



  

         মহিষ কিনিয়া আনি!



বাবা

মরি এবে ত্রাসে, শিং নেড়ে আসে



  

         মহিষ, মহিষী রানি!


  



আঁখর :

আমি কেমনে জীবন ধরি গো!


  



আমি

‘হরি বোল’বলে ডাকিতে হরি-রে!



  

         হয়ে যায় ‘বলো হরি’গো॥

তাকিয়া নৃত্য

৪৬


তাকিয়া নৃত্য


হিন্দোল – কাওয়ালি


  


নাচে মাড়োয়ার লালা


নাচে তাকিয়া।


(নাচে) ভোঁদড় হিন্দোলে


ঝোপে থাকিয়া॥


  


পায়জামা পরে যেন


নাচে গান্ডার,


নাচে সাড়ে পাঁচ মনি


ভুঁড়ি পাণ্ডার!


গঙ্গার ঢেউ নাচে,


বয়া ঝাঁকিয়া।


গামা নাচে, ধামা নাচে,


মুটকি নাচে,


জামা পরে ভল্লুক


নাচিছে গাছে!


ঝগড়েটে বামা নাচে


থিয়া তাথিয়া॥


  


ছোটো মিয়াঁ’‘বড়ো মিয়াঁ’


বলি কোলা ব্যাং


বৃষ্টিতে নাচে, নাড়ি


নড়বড় ঠ্যাং!


(নাচে) গুজরাতি হাতি


কর্দম মাখিয়া॥

তৌবা

৪৫


তৌবা


বেহাগ-খাম্বাজ – দাদরা


  



দ্যাখো

হিন্দুস্থান সায়েব মেমের,



  

        রাজা আংরেজ হারাম-খোর।



ওদের

পোশাকের চেয়ে অঙ্গই বেশি,



  

        হাঁটু দেখা যায় হাঁটিলে জোর!



আর

মেয়েরা ওদের মদ্দের সাধে



  

        রাজপথে করে গলাগলি,



আরে

শুধু তাই নয়, নাচে গলা ধরে



  

        ব্যান্ড বাজায়ে ধলা-ধলি॥


  



কোরাস :

আরে তৌবা! আরে তৌবা!!


  



আরে

যাবে কোথা মিয়াঁ? চৌদিক ঘিরে



  

        টিকি বেঁধে শিরে কাফের হায়,



খাই

আমরা হারাম সুদ? আরে যাও,



  

        ওরা যে তেমনি ক্যাঁকড়া খায়!



দ্যাখো

ষাড়-পোড়া খেলে হাড় মোটা হয়,



  

        সোজা কথাটা কি বুঝিলে ছাই!



আর

খাসি নাহি করে বোদা পাঁঠা ধরে



  

        কেটে খায়, করে নাকো জবাই॥



কোরাস :

আরে তৌবা! আরে তৌবা!!


  



দ্যাখো

মেয়েরা ওদের বোরকা না দিয়ে



  

        রেল ও জাহাজে চড়িয়া যায়,



মোদের

বোরকা দেখিলে ছেলেরা ওদের



  

        জুজুবুড়ি বলে ভিরমি খায়।



আরে

ইজ্জত তবু থাকে তো মোদের



  

        যক্ষ্মায় নয় মরে শতক,



ওরে

উহাদের মতো বেরুলে বিবিরা



  

        যদি কেউ দেখে হয় ‘আশক’॥


  



কোরাস :

আরে তৌবা! আরে তৌবা!!


  



আরে

আমাদের মতো দাড়ি কই ওদের?



  

        লাগিলে যুদ্ধ নাড়িবে কী?



আর

উহাদের মতো কাছা কোঁচা নাই,



  

        ধরিলে মোদের ফাড়িবে কী?



ছার

অস্ত্র লইয়া কী হবে, আমরা



  

        বস্ত্র যা পরি থান খানিক,



তাতে

তৌবা তৌবা করি যদি, যাবে



  

        কামানের গোলা আটকে ঠিক



কোরাস :



  



দ্যাখো

তুর্কিরা বটে ছাঁটিয়া ফেলেছে



  

        তুর্কি নূর ও মাথার ফেজ,



আর

‘দীন-ই-ইসলাম’ছেড়ে দিয়ে শুধু



  

        তলোয়ারে তারা দিতেছে তেজ!



আরে

বাপ-দাদা করে গিয়েছে লড়াই,



  

        আমরা খামখা কেন লড়ি!



দেহে

ইসলামি জোশ আনাগোনা করে



  



কোরাস :

সোবহান আল্লা! সোবহান আল্লা!!


  



মোরা

মসজিদে বসি নামাজ পড়ি যে,



  

        রক্ষা কি আছে বিধর্মীর?



ওরা

‘কাফুরের’কাফুর : কর্পূর। মতো যাইবে ফুরায়ে’



  

        অভিশাপ যদি হানেন পির!



দ্যাখো

পায়জামা চেপে রেখেছি আজিও



  

        আমাদের এই পায়ের জোর,



আরে

অক্কাই যদি পেতে হয় – দিব



  

        মক্কার পানে সরল দৌড়॥



  



জানো,

দুনিয়ায় মোরা যত পাব দুখ,



  

        বেহেশতে পাব ততই সুখ,



আর

মেরে যদি হাত-চুলকুনি মেটে,



  

        নে বাবা, তোদেরই আশ মিটুক!



সবে

পশ্চাৎ দিয়ে করিব জবাই,




বাবা

মুষল লইয়া কুশল পুছিতে



  

        আসিছে কাবুলি মুসলেমিন॥


  



কোরাস :

আল্লাহু আকবর! আল্লাহু আকবর!!

শ্রীচরণ ভরসা

কমিক গান


৪৪


শ্রীচরণ ভরসা


সোহিনী – একতালা


  



কোরাস :

থাকিতে চরণ মরণে কী ভয়,



  

        নিমেষে যোজন ফরসা।



  

মরণ-হরণ নিখিল-শরণ



  

        জয় শ্রীচরণ ভরসা॥


  



  

গর্বের শির খর্ব মোদের?



  

        চরণ তেমনই লম্বা!



  

শৈশব হতে আ-মরণ চলি



  

        সবারে দেখায়ে রম্ভা।



  

সার্জেন্ট যবে আর্জেন্ট-মার



  

        হাতে করে আসে তাড়ায়ে,



  

না হয়ে ক্রুব্ধ পদ প্রবুদ্ধ



  

        সম্মুখে দিই বাড়ায়ে॥



কোরাস :

থাকিতে চরণ মরণ কী ভয়,



  

        নিমেষে যোজন ফরসা।



  

মরণ-হরণ নিখিল-শরণ



  

        জয় শ্রীচরণ ভরসা॥


  



  

বপু কোলা ব্যাং, রবারের ঠ্যাং,



  

        প্রয়োজন মতো বাড়ে গো,



  

সমানে আঁদাড়ে বনে ও বাদাড়ে



  

        পগারে পুকুরপাড়ে গো।



  

লখিতে চকিতে লঙ্ঘিয়া যায়



  

        গিরি দরি বন সিন্ধু,



  

এই এক পথে মিলিয়াছি মোরা,



  

        সম মুসলিম হিন্দু॥



কোরাস :

থাকিতে চরণ মরণে কী ভয়,



  

        নিমেষে যোজন ফরসা!



  

মরণ-হরণ নিখিল-শরণ



  

        জয় শ্রীচরণ ভরসা॥


  



  

কহিতেছে নাকি বিশ্ব, আমরা



  

        রণে পশ্চাতে হেঁটে যাই?



  

পশ্চাৎ দিয়া ছুটে কেউ? হেসে



  

        মরিব কি দম ফেটে, ছাই!



  

ছুটি যবে মোরা – সুমুখেই ছুটি,



  

        পশ্চাতে পাশে হেরি না!



  

সামনে ছোটারে পিছু হাঁটা বল?



  

        রাঁচি যাও, আর দেরি না॥



কোরাস :

থাকিতে চরণ মরণে কী ভয়,



  

        নিমেষে যোজন ফরসা।



  

মরণ-হরণ নিখিল-শরণ



  

        জয় শ্রীচরণ ভরসা॥


  



  

আমাদের পিছে ছুটিতে ছুটিতে



  

        মৃত্যু পড়িবে হাঁপায়ে,



  

জিভ বার হয়ে পড়িবে যমের,



  

        জীবন তখন বাঁ পায়ে!



  

মোরা দেব-জাতি ছিনু যে একদা,



  

        আজ তার স্মৃতি চরণে,



  

ছুটি না তো, যেন উড়ে চলি নভে,



  

        থাকে নাকো ধুতি পরনে॥



কোরাস :

থাকিতে চরণ মরণ কী ভয়,



  

        নিমেষে যোজন ফরসা।



  

মরণ-হরণ নিখিল-শরণ



  

        জয় শ্রীচরণ ভরসা॥



  

বাপ-পিতামোর প্রদর্শিত এ



  

        পথ মহাজন-পিষ্ট,



  

গোস্বামী মতে পরাহেও বাবা



  

        এ পথে মিলিবে ইষ্ট!



  

মরে যদি যাও তাহলে তো তুমি



  

        একদম গেলে মরিয়াই!



  

চরণের জোরে মরণ এড়াও,



  

        বাঁচিবে চরণ ধরিয়াই॥


  



কোরাস :

থাকিতে চরণ মরণ কী ভয়,



  

        নিমেষে যোজন ফরসা।



  

মরণ-হরণ নিখিল-শরণ



  

        জয় শ্রীচরণ ভরসা॥

বক্ষে আমার কাবার ছবি

৪৩


বাগেশ্রী-সিন্ধু – কাহারবা


  


বক্ষে আমার কাবারকাবার : মক্কার উপাসনাগৃহ। ছবি,


   চক্ষে মোহাম্মদ রসুলরসুল : পয়গম্বর, আল্লাহ‍্-প্রেরিত মহাপুরুষ।


শিরোপরি মোর খোদার আরশ্,


   গাই তারই গান পথ-বেভুল॥


লায়লির প্রেমে মজনুঁ পাগল,


   আমি পাগল ‘লা-ইলা’রলা-ইলা : লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুর সংক্ষিপ্ত রূপ, আল্লাহ্ ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই।,


বোঝে আমায় প্রেমিক দরবেশ,


   অ-রসিকে কয় বাতুল॥


হৃদয়ে মোর খুশির বাগান,


   বুলবুলি তায় গায় সদাই –


ওরা খোদার দয়া যাচে,


   আমি খোদার ‘ইশ‍্‍ক্’ইশ‍্‍ক্ : প্রেম, প্রণয়। চাই॥


আমার মনের মসজিদে দেয়


   আজান প্রেমের ‘মুয়াজ্জিন’মুয়াজ্জিন : নামাজের জন্য আহ্বানকারী।,


প্রাণের পরে কোরান লেখা


   ‘রুহ’রুহ : অন্তরাত্মা। পড়ে তা রাত্রিদিন।


খাতুনে-জিন্নাতখাতুনে-জিন্নাত : স্বর্গের সম্ভ্রান্ত মহিলা। আমার মা,


   হাসান হোসেন চোখের জল,


ভয় করি না ‘রোজ-কিয়ামত’রোজ-কিয়ামত : মহাপ্রলয়।


   পুলসিরাতেরপুলসিরাত : দোজখের উপর অবস্থিত লম্বমান পুল বা সাঁকো, যা চুলের চেয়েও সূক্ষ্ম এবং তরবারির চেয়েও ধারালো। মুসলমানদের বিশ্বাসমতে ধার্মিক ব্যক্তিরা উক্ত পুল অতিক্রম করে স্বর্গে প্রবেশ করেন এবং পাপীরা খণ্ডবিখণ্ড হয়ে অগ্নিময় দোজখে অর্থাৎ নরককুণ্ডে পতিত হন। কঠিন পুল॥

কে যাবি পারে আয়

[ইসলামি গান]


৪২


পিলু – কাহারবা


  


    কে যাবি পারে আয় ত্বরা করি,


    তোর খেয়া-ঘাটে এল পুণ্য-তরি॥


আবু-বকর, উমর, উসমান, আলি হাইদরহাইদর : হজরতের চারজন প্রিয় শিষ্য ও খলিফা।,


দাঁড়ি এ সোনার তরণির, পাপী সব নাই নাই আর ডর,


এ তরির কান্ডারি আহমদআহমদ : বিশ্বনবির অপর নাম।, পাকা সব মাঝি ও মাল্লা,


মাঝিদের মুখে সারিগান শোন ওই–লাশরীক্ আল্লাহ্আল্লাহ্ : আল্লাহ‍্‍র কোনও অংশীদার নেই।!


    মোরা নরক-আগুনে আর নাহি ডরি॥


শাফায়তশাফায়ত : সুপারিশ। -পাল ওড়ে তরির অনুকূল হাওয়ার ভরে,


ফেরেশ‍্‍তাফেরেশ‍্‍তা : স্বর্গের দূত। টানিছে তার গুন, ভিড়িবে বেহেশ‍্‍তি-চরে।


ইমানেরইমান : ধর্মীয় বিশ্বাস। পারানি কড়ি আছে যার আয় এ সোনার নায়,


যাবি চল পারের পথিক কলেমারকলেমা : ইসলামের মূলমন্ত্র। জাহাজ-ঘাটায়।


    ফিরদউসফিরদউস : স্বর্গবিশেষের নাম। হতে ডাকে হুরি-পরি॥

সন্ধ্যা-আঁধারে ফোটাও

p class="centeralign">৪১


বেলাওল – একতালা


  


সন্ধ্যা-আঁধারে ফোটাও, দেবতা,


শুভ্র রজনিগন্ধা!


নিরাশা-শুষ্ক পরানে বহাও


প্রেমের অলকানন্দা॥


অশ্রুজলের অকূল সায়রে


ফুটুক কমল তব শুভ বরে,


বেদনা-আহত কবির চিত্তে


বাণী দাও মধুছন্দা॥


দুঃখ আসিলে সে দুখ ভুলিতে


দাও আনন্দ দুঃখীর চিতে,


আঁধার-গহন নিবিড় নিশীথে


ভাঙিয়ো না সুখ-তন্দ্রা॥

তুষার-মৌলি জাগো জাগো

৪০


সাজগিরি – ত্রিতালি


  


তুষার-মৌলি জাগো জাগো গিরি-রাজ!


পঙ্গু তোমারে আজি হানিতেছে লাজ॥


রুদ্র ও রুদ্রাণী অঙ্কে যাহার,


দৈত্য হরিছে আজ সম্মান তার।


হে মহা-মৌনী জাগো, পরো নব সাজ॥


স্বর্গ তোমার শিরে, পদতলে হায়,


আর্যাবর্ত কাঁদে চির-অসহায়!


মেঘ-লোক হতে হনো দৈত্যারি বাজ॥

সুন্দর হে, দাও দাও

৩৯


সরফরদা – একতালা


  


সুন্দর হে, দাও দাও সুন্দর জীবন।


হউক দূর অকল্যাণ সকল অশোভন।


এ প্রাণ প্রভাতি-তারার প্রায়


ফুটুক উদয়-গগন-গায়,


দুঃখ-নিশায় আনো পূর্ণ চাঁদের স্বপন॥


সকল বিরস হৃদয় মন সরস করো হে,


আশায় সূর্যে মৃত্যু-গহন বিষাদ হরো হে!


কাঁটার ঊর্ধ্বে ফোটাও ফুল,


ভোলাও পথের দুঃখ ভুল,


এ বিশ্ব হোক পূজা-দেউল


পবিত্র-মোহন॥

নয়নে ঘনাও মেঘ, মালবিকা

৩৮


মালবশ্রী – কাওয়ালি


  


নয়নে ঘনাও মেঘ, মালবিকা!


গগনে জাগাও তব নীরদ-লিখা॥


বিদ্যুৎ হানে যদি গরজায় বাজ,


সুন্দর মৃত্যুরে নাহি ভয় আজ,


আমার এ বনে এসো মনোবালিকা॥


ঝরুক এ শিরে মোর ঘন বরষা,


ফুটিবে কাননে ফুল, আছে ভরসা।


এসো জল-ছলছল পথে অভিসারিকা॥

বনে বনে জাগে কী আকুল

৩৭


ভৈরবী – সেতারখানি


  


বনে বনে জাগে কী আকুল হরষন।


ফুল-দেবতা এল দিতে ফুল-পরশন॥


হরিততর আজি পল্লব বনবাস,


মুকুল-জাগানিয়া সমীরণ ফেলে শ্বাস,


বেপথু লতা যাচে মধুপের দরশন॥


কিশোর-হিয়া-মাঝে যৌবন-দেবতা


গোপনে আনে নব জাগরণ-বারতা,


বধূর সাথে খোঁজে বঁধু বন নিরজন॥

জাগো জাগো বধূ জাগো

৩৬


ভৈরবী – আদ্ধা-কাওয়ালি


  


জাগো –


জাগো বধূ জাগো নব বাসরে।


গৃহ-দীপ জ্বালো কল্যাণ-করে॥


ভুবনের ছিলে, এলে ভবনে,


স্বপন হতে এলে জাগরণে,


শ্রী-মতী আসিলে শ্রী-হীন ঘরে॥


স্বপন-বিহারিণী অকুণ্ঠিতা,


পরিলে গুণ্ঠন সলাজ ভীতা,


কমলা আসিলে কাঁকন পরে॥

Interested for our works and services?
Get more of our update !